Date : 2024-03-29

#ভোটের ব্যারোমিটার: নজরে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র

ওয়েব ডেস্ক: এপ্রিলের শেষলগ্নে একদিকে বাড়ছে প্রকৃতির উত্তাপ। অন্যদিকে তৃতীয় দফা পেরিয়ে আগামীকাল চতুর্থ দফায় দেশজুড়ে ভোটগ্রহণ। বাকি এখনও চার দফা। ফলে পাল্লা দিয়ে প্রচারের তাপ ও উত্তাপ দুইই চড়ছে।
সেই উত্তাপে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্যের ৪২ টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কারও হাতিয়ার পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান, কারও আবার ঢালাও প্রতিশ্রুতি।

ভোটের উত্তাপ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে মহানগর থেকে জেলায়। কি ভাবছে জেলা? বিগত পাঁচ বছরে কতটা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে?

আগামী দিনে ক্ষমতায় নতুন সরকার এলে তার কাছেই বা প্রত্যাশা কী? মানুষের খবর নিতে আরপ্লাস নিউজ পৌঁছে গেছে একেবারে গ্রাউন্ড জিরোয়। আজ নজরে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র।

বীরভূম , নাম শুনলেই চোখের সামনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, বাউল, খোয়াই আর সোনাঝুরি ভেসে ওঠে। তবে ভোটের মরশুমে এ সবকিছুকে যেন ছাপিয়ে যায় নকুলদানা আর ডাঙগুলির চর্চা । শুধু ভোটের মরশুমে নয় সারা বছরের শিরোনাম মেকারের ঘাঁটি যখন সেখানে, ভোট যে চমকপ্রদ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । লোকসভা কেন্দ্র নিজের দখলে রাখতে নানা উপায় বাতলেছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল । তবে লড়াই এবার চতুর্মুখী। এই টাফ ফাইটে বাজি জেতেন কে তা অবশ্য ২৩ মে’র আগে কষ্ট কল্পনা মাত্র ।

১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়ার শাসনকালে বীরভূম জেলার উৎপত্তি হয়। বীরভূম জেলা তিনটি মহকুমায় বিভক্ত । সিউড়ি সদর,বোলপুর ও রামপুরহাট । বীরভূম জেলার সদর দফতর সিউড়ি । আর এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা হল-

দুবরাজপুর, সিউড়ি,সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, হাসন,নলহাটি, মুরারই

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা – ১৪,৮৯,১৬০
বর্তমান সাংসদ – শতাব্দী রায়।

প্রার্থী –
তৃণমূল – শতাব্দী রায়
সিপিআইএম – রেজাউল করিম
বিজেপি – দুধকুমার মণ্ডল
কংগ্রেস – ইমাম হোসেন

মূলত কৃষি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্পের উপর নির্ভর করেই বীরভূমের বেশীরভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে বেশ কিছু উন্নতি হলেও অনেকের গলাতেই আক্ষেপের সুর। ক্ষমতা হস্তান্তর হলে সেই চেহারা কী বদলাবে, তা অবশ্য সময় বলবে।

এদিকে জয় নিয়ে যুযুধান সব পক্ষই । এক সময় বীরভূম ছিল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি । এখান থেকে টানা জয় পেয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সমীকরণ বদলেছে বীরভূম । এবারও কী সবুজ ঝড় অব্যাহত রাখতে পারবে তৃণমূল? এ বিষয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, “যেভাবে হোক লিড চাই। দরকার হলে ভোটের দিন ডাঙগুলি খেলা হবে”। পাশাপাশি “টাকা দিয়ে সভা ভরাচ্ছে বিজেপি” এমন অভিযোগও করেন তিনি। অভিযোগ মিথ্যা হলে “রাজনীতি ছেড়ে দেবেন” ক্যামেরার সামনে এমন কথা বলতেও পিছপা হন না অনুব্রত মণ্ডল। গতবারের চেয়ে এবারের মার্জিন কি বেশী হবে? অনুব্রতর অকপট উত্তর, “বিশাল মার্জিনে জয় হবে। নাহলে এত খেটে কী লাভ হল?”

অন্যদিকে তৃণমূলের বিপরীতে ভারতীয় জনতা পার্টির দুধকুমার মণ্ডল । তাঁর দাবি, বোলপুরের মানুষ জানে না সেখানকার সাংসদ কে? পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনে তাঁর দাবি বীরভূমের মানুষ শাসকদলের প্রার্থী শতাব্দী রায়ের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার জন্য তৈরি ।

একসময়ের বাম শিবিরের শক্ত ঘাঁটি বীরভূম , পালাবদলের পর যে বামফ্রন্টের শক্তি সেখানে কিছুটা কমেছে তা নিজেই স্বীকার করেন বীরভূমের সিপিআইএম প্রার্থী পেশায় চিকিৎসক ডঃ রেজাউল করিম । প্রচারে ছোট ছোট মিটিং-ই তাঁর এক্স ফ্যাক্টর । তাঁর মতে বিজেপি ও কংগ্রেস একই মুদ্রার দুই পিঠ। রাজনীতির আঙিনায় নবাগত হলেও জয় নিয়ে চিন্তিত নন রেজাউল করিম ।

অন্যদিকে কংগ্রেস, প্রার্থী ইমাম হোসেন ঝড় তুলছেন প্রচারে । জয়ের ব্যাপারে কনফিডেন্ট কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেন ।

সবমিলিয়ে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে জমজমাট বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র । একদিকে ১০০ দিনের কাজ, কন্যাশ্রী, রাস্তাঘাট সংস্কারকে হাতিয়ার করে ভোট ময়দানে নেমেছে তৃণমূল । অন্যদিকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটের ফলের নিরিখে বিরোধী পরিসরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি । তাই বীরভূমকে পাখির চোখ করে দলের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে বাড়াতে চেষ্টার ত্রুটি নেই বিজেপি শিবিরের। হারিয়ে যাওয়া জমি ফিরে পেতে মরিয়া সিপিএমও। নির্বাচনের আগে ঘর গোছাতে ব্যস্ত তারাও।