Date : 2024-03-29

এক জীবনের বই-তরণী…

ওয়েব ডেস্ক: যতই পৃথিবীটা ‘ছোটো হতে হতে স্যাটালাইট আর কেবিলের মাঝে ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দি’ হোক, তবুও কিছু মানুষের কাছে বইয়ের জন্য ভালোবাসা কোনোদিনই কমবে না। গ্যাজেটপ্রেমী মানুষের হাতের মুঠোফোনে যে বইের আপডেটেড ভার্সনের পিডিএফও থাকবে, তা তো বলাই বাহুল্য।

কিন্তু যারা বইপ্রেমী তাদের কাছে হাতে নিয়ে বই পড়া এবং নতুন বইয়ের গন্ধে ডুবে যাওয়ার থেকে আনন্দের কিছু হতে পারে না। তাই টেকনোলজি যতই এই জগতকে নিজের বশীভূত করুক, কিছু জিনিসের অনুভুতি কৃত্তিমভাবে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। বই তাদের মধ্যে একটি।

ছোটোবেলায় নতুন ক্লাসে ওঠার থেকেও বেশি মজা হত যখন হাতে নতুন বইয়ের তালিকা দেওয়া হত। তবে তারপরের কাজটা ছিল খুব গুরুত্বপুর্ণ। নতুন বই কিনে মায়ের হাত ধরে বইগুলোকে বাঁধাই করতে যাওয়া। সেইসব দিনগুলো হারিয়ে গেলেও, হারিয়ে যায়নি বই বাঁধাই করার সেই জগৎটি।

কলকাতায় কলেজস্ট্রিটের বুকে বৈঠকখানা রোড, যেখানে এখনও চলে বই খাতা বাঁধাইয়ের কাজ। কলেজস্ট্রিট থেকে সূর্যসেন স্ট্রিট ধরে এগিয়ে গেলই মিলবে এই আলাদা দুনিয়ার খোঁজ। যেখানে প্রতিটি গলির বুকে সারি দিয়ে মানুষের পর মানুষ কাজ করে চলেছে বই বাঁধাইযের। তবে এখানে এখনও যে যন্ত্রগুলি ব্যাবহৃত হয় সেইগুলি খুবই পুরোনো আমলের। আধুনিক যন্ত্র কেনো কেনা হয়নি সেই কথা জিঞ্জেস করলে বৈঠকখানা রোডের কর্মচারিদের কাছ থেকে মেলে একটাই উত্তর, ‘টাকার অভাব’।

কারণ বই বাঁধাইয়ের মতো কম টাকার একটি ব্যবসায় যদি লাখখানেক টাকার মেশিন কিনতেই ব্যায় হয়ে যায়, তাহলে তো এই জীবিকায় জড়িত ব্যাক্তিদের জীবন চালানোটা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সত্যিই তো এই কারণবশতই কত মানুষের কত না পাওয়াগুলো না পাওয়াই রয়ে যায়। তবে বই বাঁধাইয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যাক্তিদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই জীবিকায় টাকার কোনো ঠিক নেই।

কোনোদিন ১০০০ টাকা উপার্জন হলে, তারপরের দিন বাড়ি ফিরতে হতে পারে ফাঁকা হাতে। তাদের দিনে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা কাজ করতে হয়। কখন কখনও চলে ওভার টাইমও। এই জীবিকায় নেই বয়সের কোনো সীমারেখা। ২০ বছর বয়সী থেকে কাজ করেন সত্তরোর্ধ মানুষেরাও। তাঁদের শরীরে নেই শক্তি, চোখের দৃষ্টিও হয়েছে ধুসর, তবুও বই বাঁধানোই একমাত্র ভরসা।

কিছু বই বেঁধে যা আয় হয় তাতেই চলে তাদের সংসার। শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তাতে আদৌ কি কোনো লাভ হবে এই বই বাঁধাই কর্মীদের? তাঁদের উত্তর তেমন কোনো লাভের আশা তারা করেন না। তাঁদের কাছে ভোট মানে শুধুমাত্রই একটা গণতান্ত্রিক অধিকার পোষণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তবুও ক্ষীন আশার আলো তো থাকে সবার মনেই। তারাও চায় একটা সুস্থ জীবন ও পরিবারের মুখে তৃপ্তির হাসি, ব্যাস এইটুকুই। তবে আগত সরকার কি নিয়ে আসছে এই মানুষদের স্বার্থে, তা তো সময়ই বলবে।