Date : 2024-04-26

মুভি রিভিউ- দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন

ওয়েব ডেস্ক: “বাঙালি আসলে অতীতচারি জাতি…বাঙালি শুধু মানতে পারে না”। বাঙালি জীবন থেকে কী কী হারিয়ে গেছে,তার লিস্ট করার ধৃষ্টতা বোধহয় কোনো বাঙালি অন্তত করবেন না। তবে হঠাৎ আকাশে পেঁজা তুলোর ভেলা দেখলে, বাঙালির মনে পড়ে দুর্গাপুজোর কথা, শুকতারা-পূজাবার্ষিকীর কথা আর সেই স্মৃতির ভিড়ে হঠাৎ উঁকি দিয়ে যায় ছোটবেলার ফেলুদা,ঘনাদা,টেনিদারা। অপেক্ষা নেই, আবেগ নেই, ভোলার ভেলায় বাঙালি এমনকি তার রহস্যপ্রেমী মনকেও তুলে দিয়েছে কবেই। বাঙালির সেই পুরোনো ইমোশনে ফের একবার  শান দিতে পুজো,প্রেম আর রহস্যের সহজ সমীকরণে গল্প সাজিয়েছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোট মিটতেই সিনে প্রেমী বাঙালির চর্চার কেন্দ্রে এখন ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ –এর সিক্যুয়েল ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’।তবে এই দুটি সিনেমার প্রেক্ষাপট রহস্যে মোড়া হলেও মোটেও কিন্তু কোনো গোয়েন্দা গল্প নয়। বাঙালিয়ানায় ভরপুর, সিরাজদৌল্লা-জগৎ শেঠ-এর ইতিহাস ঘেঁটে প্রেম-পুজো-রহস্যের মশলা মাখানো এক ছবি।ছবির অন্যতম ইউএসপি বাংলা ছবিতে ‘গুপ্তধন’ নিয়ে হাতে গোনা কয়েকটা ছবিরই নাম মনে পড়ে।পাশাপাশি গল্পের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি সোনাদা(আবীর), ঝিনুক(ইশা), আবির(অর্জুন) এক্কেবারেই মৌলিক চরিত্র। এই ছবি একেবারেই সাহিত্য নির্ভর নয়।

কল্পিত দুর্গাবতী দেবরায়ের পারিবারিক ‘গুপ্তধন’-এর সন্ধান পেতে সোনাদা-আবির-ঝিনুক চলে আসে বনপুরুরিয়া নামের একটি জায়গায়। গল্পের শুরুটা সেভাবেই। বিশাল রাজবাড়ি, দিঘি ঘেরা লোকেশন। আর আছে গল্পের পরতে পরতে জমে থাকা রহস্য। আবার রয়েছে লোভ, হিংসা, চুরি, পালটা চুরির নাটক। রহস্যের উন্মোচনের পাশাপাশি ঝিনুক আর আবিরের মিষ্টি রোম্যান্সটুকু যেন উপরি পাওনা ।

নজর কেড়েছে দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির পরিবেশ, কাশফুল আর  জঙ্গলে মোড়া গ্রামবাংলার চেনা ছবি, আবহ বেঁধেছেন বিক্রম ঘোষ নিপুণ কৌশলে। বাংলা সিনেমায় বারবার ফিরে এসেছে পুজো কনসেপ্ট।তা “জয়বাবা ফেলুনাথ”, “মেঘে ঢাকা তারা” বা “দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন” ব্যতিক্রম নয়।যেকোনো সমস্যায় মা দুর্গাই বাতলে দিয়েছেন সমাধান।পাশাপাশি  সাবলীল অভিনয়ে ছবির ছন্দ পতন হতে দেননি কেউই। আবীর- ইশা-অর্জুনের পাশাপাশি অভিনয়ে নজর কেড়েছেন কৌশিক সেন, চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য।   

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়তা, বুদ্ধিমত্তা ও  সেন্স অফ হিউমার-এর অমোঘ মিশেলে গড়ে তোলা হয়েছে ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র সোনাদাকে।ইতিহাসের প্রফেসর, কর্মসূত্রে থাকতেন বিদেশে, আপাতত ঠিকানা কলকাতা।নেশা রহস্যভেদ, তবে তিনি ঠিক ফেলুদার মতো কোনো গোয়েন্দা নন, টাকার বিনিময়ে কোনও রহস্যের সমাধান করেননা।ছবিতে তাঁর চরিত্রটিকে বাঙালি বাড়ির “সোনা-ছেলে” টাইপের বললেও ভুল হবে না।

পাশাপাশি সোনাদার দুই সাগরেদ ঝিনুক ও আবিরের চরিত্রটিও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। তবে হিরো সোনাদাই। গল্পের শুরুতেই পরিচালক জানিয়েছিলেন সুবর্ণ সেন তথা সোনাদা দক্ষ সাঁতারু। তাই গল্পের ক্লাইম্যাক্সে দিঘির গভীরে গিয়ে পারিবারিক স্বর্ণশঙ্খটি উদ্ধার হয় সোনাদার হাতেই।তবে অ্যাভেঞ্জার্স দেখা মন কতটা ভরবে দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনে, প্রশ্ন ওঠে বৈকি।

কিন্তু দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনের হাত ধরে ফের একবার হলে ফিরছে বাঙালি দর্শক। প্রথম দিন থেকেই কলকাতার পাশাপাশি দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো শহরেও হাউজফুল ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ । পারফর্মস্যান্স বলছে এবছরের ব্লকমাস্টার ছবি হতে চলেছে দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন।