ওয়েব ডেস্ক: কোন বিষয়ে পুরনো তথ্য পড়তে বা শুনতে বিরক্ত বোধ করা স্বাভাবিক। অনেকে হয়তো বলেন, ধুর! যত্তসব মান্ধাতার আমলের গল্প। শুধুমাত্র প্রচলিত কথা হওয়ার কারণেই অনেকেই এই কথাটি ব্যবহার করে থাকেন। “মান্ধাতা” অবশ্যই অর্থ আছে।
শুধুমাত্র পুরনো কথা বোঝাতেই কি মান্ধাতার আমল কথাটির প্রচলন হয়েছে? না, “মান্ধাতা” শুধুমাত্র কোন শব্দ নয়। এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরাণ প্রথিত যুগের এক রাজার কাহিনী।
প্রশ্ন হল, কে এই রাজা। পুরতন বিষয়ের সঙ্গে কি বা যোগ আছে রাজা মান্ধাতার? আসলে এই রাজার জন্ম বৃত্তান্ত অবাক করার মতো। মান্ধাতার পিতা যুবনাশ্ব পুত্র সন্তান লাভ করতে ব্যর্থ হয়ে আশ্রমে তপস্যায় ব্রতী হন।
দিনের পর দিন তার তপস্যা সন্তষ্ট হয়ে তাকে আশ্রমে বসবাসকারী মুনিগণ তার জন্য যজ্ঞ আরম্ভ করেন। সারারাত যজ্ঞ শেষে এক কলসপূর্ণ জল যজ্ঞস্থলে ফেলে রেখে চলে গেলেন মুনিরা।
যাওয়ার আগে তারা বলে গেলেন এই জল রাজা যুবনাশ্বের স্ত্রী পান করলে তার পুত্র সন্তান লাভ হবে। কিন্তু রাতে পিপাষার্ত রাজা যুবনাশ্ব নিজেই উঠে জল পান করে ফেলেন ওই কলসি থেকে।
সকালে মুনিরা দেখলেন ওই কলসির জল কমে গেছে। মুনিরা তখন রাজাকে বলেন, হে রাজন পুত্র সন্তান তুমি লাভ করবেই তবে পুত্রসন্তান তোমার গর্ভজাত হব।
তবে তার গর্ভাধানের কষ্ট দূর করতে মুনিরা বিধান দেন, একশো বছর পর রাজার বাম পেট বিদীর্ণ করে তার পুত্র সন্তান জন্ম নেবে।
পৌরাণিক এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গল্প লেখা হয়েছে, যেখানে যুবনাশ্বকে বলা হয়েছে “দ্য প্রেগনেন্ট কিং”।একই নামে দেবদূত পৌত্তনিকের একটি বইও আছে।
সে যা-ই হোক, ছেলে হয়ে যাওয়ার পরে এবার দেখা দিল আরেক সমস্যা। মান্ধাতাকে তো কোনো মা গর্ভে ধারণ করেনি। ফলে বুকের দুধ সে কোথায় পাবে?
এখন বুকের দুধ ছাড়া মান্ধাতা বাঁচবেই বা কী করে? জটিল এই সমস্যার সমাধান দিতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং ইন্দ্র। তিনি নিজে মান্ধাতাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলেন।
তার মুখে নিজের তর্জনী পুরে দিয়ে বললেন,”মাম ধাস্যতি”,মানে আমাকে পান করো। সেখান থেকেই পুত্রটির নাম রাখা হয় মাম-ধাতা বা মান্ধাতা।
ইন্দ্রের সেই আঙুল ছিল অমৃতক্ষরা। মানে সেই আঙুল দিয়ে অমৃত ঝরত। এই গল্পের মধ্যেই রয়েছে রাজা মান্ধাতার কথা। এই গল্প লোক মুখে প্রচারিত হয়ে মান্ধাতার আমলের গল্প নামে পরিচিত।