ওয়েব ডেস্ক: ঈদের মরসুমে ফের একবার রূপোলী পর্দার দর্শকের সামনে হাজির হলেন বলিউডের “সুলতান” সলমন খান। ঈদের দিন ভাইজান-এর ছবির মুক্তি ঘিরে বেশ কিছুদিন তার অনুরাগীদের মধ্যে উদ্দীপনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু ঈদের দিন ছবি রিলিজ করে পরিচালক আলি আব্বাস জাফরের হাতে বক্স অফিস হিট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে “ভারত” নির্মান কি আদৌ সফল হল, সেই নিয়ে অবশ্য চর্চা করতে বসে গেছেন চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার ছবি “Ode to my Father” -এর কাহিনী অবলম্বন করে ভারত ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে বাবা ও ছেলের কাহিনী। যদিও কাহিনী বুঝতে দর্শকদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পটভূমিকায় পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু রিফিউজিদের জীবন সংগ্রাম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবেগান্বিত করে রাখবে দর্শককে।
দেশ ভাগের দাঙ্গায় বাবা ও বোনকে পাকিস্তানের মাটিতে হারিয়ে ছোট্ট ভারত (সলমন খান) তাঁর মা ও পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে এসে পারিবারিক আত্মীয়র কাছে আশ্রয় নেয়। সলমনের ভারত চরিত্রটি শুধুমাত্র একজন রিফিউজির চরিত্র নয়। ছবির প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তুলে ধরা হয়েছে ‘একজন মানুষের পরিচয় তৈরি হয় তার পরিবারের মধ্যে এবং এক একজন মানুষ মিলত ভাবে গড়ে তোলে দেশের পরিচয়’ এই তত্ত্বটি।
পরিচালক: আলি আব্বাস জাফর
অভিনয়: সলমন খান, ক্যাটরিনা কাইফ, দিশা পাটানি, সুনীল গ্রোভার, জ্যাকি শ্রফ, সোনালী কুলকর্ণি
ছবির ধরন: Action, Drama
ছবির সময়: 2 hrs 40 min
ছোট্ট ভারত তার বাবাকে দেওয়া কথা অনুসারে মা ও ভাই বোনেদের নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। হাজার বাধা বিপত্তির মধ্যেও পারিবারিক একতা ও ধরে রাখতে সচেষ্ট ভারত। ঠিক যেন দেশের সংহতির বার্তা রয়েছে গোটা পরিবার নিয়ে ভারতের এই খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকার মধ্যে। ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভারতের জীবন জীবিকার মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে দেশের উত্থানের কাহিনী। অখন্ড ভারতের স্বাধীনতা লাভ থেকে ৯০ দশকে বিশ্বায়নের জন্য উন্মুক্ত ভারতের দরজায় এসে থেমেছে ছবির চিত্রনাট্য।
ছবিতে নানান পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত। সেই পেশায় হাড় ভাঙা শ্রম ও জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ছবির কাহিনী যেন প্রচ্ছন্ন ভাবে তুলে ধরেছে স্বাধীনতার পূর্ণলগ্ন থেকে আমাদের দেশের একমাত্র মূলধন শ্রম এবং দেশের শ্রমজীবী মানুষ। তার পাশাপাশি কুমুদের সঙ্গে দুষ্টু মিষ্টি প্রেম ও নাচ গানের মধ্যে দিয়ে দর্শক পাবে ফুল এন্টারটেনমেন্ট। তবে ছবির শেষ ৪০ মিনিট হলে দর্শক ধরে রাখার চেষ্টাটা বেশ বিরক্তিকর।
অভিনয়ের বিচারে সলমন ও ক্যাটরিনা জুটি অনবদ্য। তবে কোথাও যেন সলমনের পার্শ্বচরিত্রে সুনীল গ্রোভার ছাপিয়ে গিয়েছেন সলমনকে । দিশা পাটানি বা ক্যাটরিনা কারোর অভিনয়ই মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো নয়। অন্যদিকে জ্যাকি শ্রফ, সোনালী কুলকর্ণি তাদের চরিত্র তুলে ধরতে কিছু খামতি রাখেননি। হাসি, কান্না, দুঃখ, আনন্দ, রোম্যান্স, অ্যাকশন সহ বলিউডের চলচ্চিত্রের সব মশলা এই ছবিতে পাবেন দর্শকরা।
গানগুলো সুন্দর হলেও দৃশ্যের সঙ্গে মিল খুঁজে বের করা খুব মুশকিল। একটি পেশা থেকে হঠাৎ করে অন্যপেশায় লাফিয়ে চলার ঘটনাটি বাস্তবের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। সলমনের স্টারডোম আর পরিচালকের মুন্সিয়ানা ঈদের বাজারে ভারত দর্শনে গেলে আপনার এন্টারটেনমেন্টের ঘাটতি পড়বে না, হল ফেরৎ দর্শক হিসাবে এইটুকু বলা যায়।