ওয়েব ডেস্ক: “মুকুটটা তো পড়েই আছে, রাজাই শুধু নেই…”, কিংবদন্তী শিল্পী মান্না দে-এর এই গানটি যেন পরতে পরতে মিলে যায় উত্তম কুমারের সঙ্গে।
আজ ৩৯ বছর কেটে গেছে, উনি নেই।
উত্তম কুমার চলে যাওয়ার সঙ্গেই বাংলা সিনেমা হারিয়েছে একটা গোটা যুগ।
১৯৮০ সালে এই দিনে তিনি চলে যান রূপোলি পর্দার মায়া ত্যাগ করে।
সত্যিই একজন পরিপূর্ণ “নায়ক” হতে পেরেছিলেন তিনি।
যদি সত্যজিৎ রায়ের ভাষায় উত্তম কুমারের সম্মন্ধে বলতে হয়, তাহলে বলা যেতে পারে, “উত্তমকুমারের অভিনয় ও ব্যক্তিত্বে সত্যিই একটা স্বাতন্ত্র্য আছে। মনে হল ছেলেটি হলিউডের ছবি-টবি দেখে। অভিনয়ে থিয়েটারের গন্ধ নেই, চলায়-বলায় বেশ একটা সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্য। ক্যামেরা বস্তুটিকে যেন বিশেষ তোয়াক্কা করে না। তার উপরে চেহারায় ও হাবেভাবে বেশ একটা মন টেনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে”।
সত্যজিৎ রায় “নায়ক” ছবিটি যে উত্তম কুমারকে দেখেই বানিয়েছিলেন, সেটা তো সবারই জানা। উত্তম কুমার প্রথমবারেই এই ছবির গল্প শুনে খুব পছন্দ করেছিলেন। হয়তো নিজের জীবনের সঙ্গে সাদৃশ্যই ছিল তার কারণ। উত্তম কুমারের জীবনের গল্পটা অনেকটা এরকমই। সংসারের অনটনে পড়াশোনা ছেড়ে কলকাতার পোস্ট ট্রাস্টে ক্লার্কের চাকরিটা নিয়ে ফেলেন। তবে চাকরির সঙ্গেই তাল মিলিয়ে নিয়মিত চলত আহিরীটোলায় নিজেদের নাট্যদল “সুহৃদ সমাজ”-এ থিয়েটার।
তাঁর অভিনয়ে দেখে ডাকও পেলেন টলিপাড়ায়।। তবে কপালের শিকে ছিঁড়ল না। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত চলল একের পর এক ফ্লপ। তবে দাঁত কামড়ে কেবল অভিনয়কে ভালোবেসে টিকে গেলেন সেখানে। ফল মিললও। ১৯৫৩তে মুক্তি পেল “সাড়ে চুয়াত্তর”। শুরু হল অরুণ কুমার চ্যাটার্জির স্টারডম, উত্তম কুমার হিসেবে। তারপর একের পর এক শুধুই হিট। “নায়ক” ছিল তাঁর ১১০তম ছবি।
“মহানায়ক’ সত্যিই ছিলেন একজন প্রকৃত শিল্পী। অভিনয় ছাড়াও তিনি পরিচালক, গায়ক, সংগীত পরিচালকও ছিলেন। এই ম্যাটিনি আইডল পেয়েছিলেন “অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি” ও “চিড়িয়াখানা”র জন্য জাতীয় পুরস্কারও। উত্তমকুমারের মতো এখজন রোম্যান্টিক হিরো বোধহয় বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ আর পাবে না।
এই বিষয় বলতে গেলে আবারও সত্যজিৎ রায়ের কলমে, “শুধু উত্তমের কথা বলতে গেলে এটা বলা যায় যে, নায়িকার সান্নিধ্যে এলেই অনেক নায়কের মধ্যেই সিঁটিয়ে যাওয়ার ভাবটা ক্যামেরায় অব্যর্থ ভাবে ধরা পড়ে, উত্তমকুমারের মধ্যে সেটি নেই। বরং প্রেমের দৃশ্যে এঁর অভিনয় খোলে সবচেয়ে বেশি। নারী-পুরুষের সম্পর্ক যেখানে চিত্রকাহিনির অন্যতম প্রধান উপাদান, সেখানে এটা যে কত বড় গুণ সেটা সহজেই অনুমান করা যায়”।
আজ উত্তম কুমারের ৩৯ বছরের মৃত্যুবার্ষিকীতে একটা কথাই সবার অগোচরে প্রত্যেকের মনের গভীরে ঘোরাফেরা করে, সেটা হল, তাঁর ৩০ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রকে যেসব উপাদানে সমৃদ্ধ করেছেন তার কোনো বিকল্প কোনোদিন হয়নি, আর ভবিষ্যতে হবেও না।