Date : 2024-04-26

ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের তৈরি স্বপ্ননগরী “কল্যাণী” আজানা কাহিনী

ওয়েব ডেস্ক: পাটনার গরিব বাঙালি পরিবারের ছেলেটির জীবনের বর্ণময় ইতিহাসের অনেক খুঁটি-নাটি কাহিনী আজও চাপা পড়ে আছে স্মৃতির অন্তরালে। না, শুধুমাত্র একজন সফল ডাক্তার নন তিনি, এ এক বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের গল্প। এদেশের ভিভিআইপি থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষ যাঁর চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়েছেন। আবার জনপ্রতিনিধি হিসাবে সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়াতে দেখেছেন এই মানুষটিকে। আসলে তিনি ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, যাঁর জীবনে অনেক না সম্ভব হওয়া ঘটনাও সম্ভব হয়েছিল।

একাধারে চিকিৎসক, আবার রাজনীতিক, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সম্পূর্ণ জীবনটাই সেবা ব্রত পালন করে কেটেছে। তাঁর জীবনের প্রথম অধ্যায় শুনলে মনে হবে কি করে সম্ভব! অর্থাভাবে পড়াশুনো চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সি চালাতেন ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মেল নার্স হিসাবেও কাজ করেছেন। এত কাজের মধ্যে বই খাতা উল্টে দেখার সময় পেয়ে উঠতেন না।

ভাগ্যের পরিহাস, পরবর্তী জীবনে বিখ্যাত চিকিৎসক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমবি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ভেঙে পড়েননি, বা ডাক্তারি পড়ার বাসনাও ত্যাগ করেননি।

দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আরও বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে মাত্র ১২০০ টাকা হাতে বিলেত পাড়ি দিয়েছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। ডাক্তার হবেন, মানুষের সেবায় নিয়োজিত করবেন জীবন। অদম্য চেষ্টা তাঁকে ফিরিয়ে দেয়নি। বিলেত থেকে মাত্র দুবছরের মধ্যে কলকাতায় ফিরে আসেন এম আর সি পি আর এফ আর সি এস ডিগ্রি নিয়ে।

আর কলকাতা ফিরেই মাত্র ৫ টাকায় ডাক্তারি প্র্যাকটিস শুরু করেন বিধানচন্দ্র রায়। বয়সে যুবক তবুও তাঁর রোগীর তালিকায় তখন ছিলেন দেশের রথী-মহারথীরা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মৃত্যুশয্যায় চিকিৎসা করেছিলেন তিনি।

কলকাতার খ্যাতনাম এক ডাক্তারের বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত ছিল তাঁর। বয়সের স্বভাবে সেই ডাক্তারের মেয়ের প্রেমে পড়লেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। শোনা যায় মেয়েটির নাম ছিল কল্যাণী। কিন্তু সেখানেও একরাশ হতাশাই প্রাপ্য ছিল তাঁর জন্য। মেয়েটির বাবা তখন কলকাতার মস্ত বড় ডাক্তার। যুবক ডাক্তার বিধানচন্দ্রকে ডেকে তাঁর মাসিক আয় জিজ্ঞাসা করলেন। মাত্র ৫ টাকা আয় শুনে হেসে মেয়ের বাবা বললেন, তাঁর মেয়ের সারাদিনের হাত খরচও ৫ টাকা নয়।

অগত্যা অর্থের দণ্ড ভোগ করল প্রেম। মেয়ের বাবার অনিচ্ছায় মনে মনে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে স্বপ্নের বুননে ছেদ পড়ল। সেদিন ফিরে এসেছিলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। অদম্য সংকল্প নিয়েছিলেন জীবনে অন্য কোন নারীকে বিবাহ করবেন না। সব ভুলে পা রেখেছিলেন রাজনীতিতে, তারপর ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা বাংলার রূপকার ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের। মুখ্যমন্ত্রীত্ব সামলে ছিলেন।

কিন্তু ভুলে যাননি কল্যাণীকে। পরবর্তীকালে তাঁর নামেই নাকি ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় তৈরি করেছিলেন বর্তমান নদীয়া জেলায় অবস্থিত কল্যাণী শিল্পনগরী। যদিও এই কাহিনী সম্পূর্ণ লোকশ্রুতি। এর সত্যতা নিয়েও দ্বিমত আছে। পর্দার আড়লে থেকে যাওয়া কাহিনীর বাস্তবতা নিয়ে সংশয় থাকলেও এ ছিল অসাধারণ মানুষের জীবনের সাধারণ কাহিনী।