কলকাতা: আজ থেকে ৫৫০ বছর আগে ওড়িয়া-গৌড়ীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন রচনা করেছিলেন প্রেমাবতার শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। তাঁর অনুপ্রেরণায় গুপ্তিপাড়ায় বাংলার প্রাচীন রথযাত্রার সূচনা হয়। বাংলায় মেলা সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন রথের মেলা। শ্রীক্ষেত্রে রথে চড়েন জগন্নাথ, তাতে কী! রথের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার রাস্তায় ধারে পাঁপড় ভাজা, জিলিপি, বেলুন, তালপাতার ভেঁপু, কাঁচের চুড়ির বাহার দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। ছোটদের হাতে হাতে কাঠের রথে মাটির জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা ঘুরে বেড়ান পথে পথে।
পুজোর ক্ষেত্রে যদি মেগা-শো-এর ট্যাগ জুড়ে থাকে দুর্গাপুজোর সঙ্গে। মেলার ক্ষেত্রে এই মেগা ট্যাগের অধিকারী রথের মেলা। কারণ এর বিশাল আয়োজন, কাঠের রথ। আর অবশ্যই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদের ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার-এর পারিবারিক প্রেজেন্স। আট থেকে আশি মেলায় মেতে উঠতে আলাদা কোন কারণ লাগে না।হুগলীর শ্রীরামপুরে মাহেশের রথ, কলকাতায় ইসকন মন্দিরের রথ, পরেশনাথ মন্দিরে জৈনদের রথযাত্রা, শহর ও শহরতলির সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন রথযাত্রার তালিকায় আছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে রথযাত্রার প্রচলন রয়েছে। রথটানার পর বাড়ির কচিকাঁচাদের দ্বিগুন আনন্দ দিতে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রথের মেলার খোঁজ নিতে এক ঝলকে চোখ বুলিয়ে নিনি। আর বিকেল পড়তেই কাল বেরিয়ে পড়ুন রথের মেলার আনন্দ নিতে।
কলকাতা (দক্ষিণ)
১. গড়িয়াহাট থেকে এগিয়ে যান কসবা রথতলার দিকে, মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছে পাবেন বিশাল রথেরমেলা। এই মেলা চলে ১৫ দিন ধরে।
২. আর একটু এগিয়ে পৌঁছে যান রুবির কাছে। সেখানেও পাবেন রথের মেলা। মেলা চলে এক মাস ধরে।
৩. আরও দক্ষিণে মুকুন্দপুরে কাছেও পেয়ে যাবেন রথের মেলা।
৪. গড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নাকতলা পর্যন্ত বসে রথের মেলা। শুধুমাত্র রথের দিন আর উল্টোরথের দিনই এই মেলা হয়।
৫. কলকাতার সবচেয়ে বড় ইসকনের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে পার্কস্ট্রীটে রথ রাখা থাকে। সেই উপলক্ষ্যে ওই অঞ্চলে মেলা বসে। মেলায় গেলে প্রতিদিন মিলবে ভোগপ্রসাদ।
৬.বড়িশা শখের বাজারে পূজা কমিটি সামান্য দক্ষিণার বিনিময়ে রথের দিন সুন্দর ভোগ বিতরণ করে সাধারণের মধ্যে। এই উপলক্ষে সেখানে মেলা বসে।
৭. টালীগঞ্জের কবরডাঙ্গাতে অনেক বছর ধরে রথের সময় মেলা বসে। ১৫ দিন ধরে এই মেলা চলে।
৮. ঠাকুরপুকুর বাজারের কাছে রথ উপলক্ষে মেলা বসে। ১৫ দিনের বেশি এই মেলা চলে। এছাড়াও ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে বিদ্যানগর, বিবিরহাট, রায়পুরের দিকে গেলে বা ওদিকে ডায়মন্ডহারবারের দিকে যাওয়া গেলেও রাস্তার ধারে ধারে রথ উপলক্ষে বহু বহু পুরনো মেলার চল আছে।
৯.আগে রাসবিহারী মোড়ে যে মেলা হতো সেটা যানবাহনের অসুবিধার জন্য সরানো হয়েছে। এখন চেতলাতে এই মেলা বসে। চেতলা ব্রিজ এর নিচে আদি গঙ্গার ধারে চলে এসেছে । মেলা চলে ১৫ দিন ধরে।
কলকাতা (উত্তর)
১. দক্ষিণ ছেড়ে যত উত্তর কলকাতার দিকে এগিয়ে যাবেন, সাবেকি রথের মেলা দেখতে পাবেন। শ্যামবাজার থেকে বিটি রোড ধরে ডানলপের দিকে গেলেই চিড়িয়ামোড়ে পাবেন রথের মেলা। তবে শুধুমাত্র রথের দিনই হয় এই মেলা।
২.সল্টলেক করুনাময়ীতে রথের মেলা বসে। ১৫ দিন ধরে থাকে এই মেলা।
৩. আরও উত্তরে পৌঁছে যান, বেলঘরিয়ায় বসে রথের মেলা।
৪. দমদম নাগেরবাজারে রাস্তার দুধার জুড়ে বসে রথের মেলা। এই মেলাও উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রথের মেলা।
৫. এয়ারপোর্ট ১ নম্বর-এর কাছেও একটা রথের মেলা হয়। দমদম গোড়াবাজার থেকে মিলন সংঘ ক্লাব-এর কাছে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি পর্যন্ত এই রথ টানা হয়।
এছাড়া কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও অসংখ্য রথের মেলা হয়। যার মধ্যে হুগলীর গুপ্তিপাড়ার মেলা প্রাচীন ও বিখ্যাত। এই মেলায় পৌঁছে গেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও অন্যতম মেলা ঘুরে দেখার আনন্দ উপভোগ করবেন। শ্রী চৈতন্যদেবের সময় থেকে এই মেলা চলছে।এছাড়া মেদিনীপুর, বালুরঘাট, দুই দিনাজপুর, মালদহে প্রাচীনকাল থেকে রথেরমেলা হয়।