ওয়েব ডেস্ক: “সবসে উঁচি ছলাং” টা হৃত্বিক রোশান থুড়ি আনন্দ কুমারই দিয়েছেন। সুপার 30 স্বপ্ন, একটা চেষ্টা, আশা, হেরে না যাওযার গল্প বলে। একটা মানুষ, যে নিজের সবটা দিয়ে দিয়েছে কেবল অন্য মানুষদের ভালোর জন্য। এমন মানুষ আর পাওয়া যায়ই বা কোথায়? তবে এই আনন্দ কুমারকে দেখে “পাওয়া যায়না” বলাটা একটা মস্ত বড় ভুল হবে। তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলে আসা যাক সুপার 30র গল্পে।

পাটনার এক প্রত্যন্ত গ্রামের দারিদ্রের সীমারেখার নীচে থাকা একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র গণিতবিদ আনন্দ কুমার। পোস্ট অফিসের সামান্য এক পিওন তার বাবা। হঠকারিতায় বিদেশে পাঠানো একটি গণিতের সমস্যাই আনন্দের জীবনে আনে একটি বড় মোড়। তবে শেষটা সুখকর হয়না।
সিনেমা: সুপার30
সিনেমার ধরন: ড্রামা
অভিনয়: হৃত্বিক রোশন, ম্রুনাল ঠাকুর, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, আদিত্য শ্রীবাস্তব
রেটিং: 3/5
মূলত অর্থনৈতিক কারণেই কেমব্রিজের মত বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার সুযোগ পেয়েও, তা ছেড়ে দিতে হয়। পরে পরিবারের পেটের জ্বালার তাড়নায় বিক্রি করতে শুরু করে পাঁপড়। এইভাবে নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়েই আনন্দ কুমার শুরু করে তার সুপার 30 ক্লাস। হয়ে ওঠে আন্ডার প্রিভিলেজড ছাত্রছাত্রীদের মসিহা। লক্ষ্য একটাই, তাদের আইআইটির দোরগোড়া পেরোনো।
“রাজার ছেলে রাজা হবে না, হবে সেই, যে যোগ্য”, বাবার এই বাক্য শুনে বড় হয়ে ওঠা আনন্দ জয়ী হয়, আর তার সঙ্গেই জয় হয় সেই ৩০টি বাচ্চারও। না, শেষ দিন পর্যন্ত নিজেও হাল ছাড়েননি, হাল ছাড়তে দেননি তার ছাত্রদেরও। “সবার উপরে ‘শিক্ষা’ সত্য, তাহার উপরে কিছু নয়”।
গরীব বাবা-মা, দিন তিনেক খালি পেট, অপুষ্টি, এইসব খুঁটে খাওয়া মানুষরাই বোধহয় সবার অগোচরেই অনেকটা বেশি দুনিয়াটা দেখে ফেলে। তবে তাদের সঙ্গে যদি আনন্দ কুমারের মতো একজন মানুষের ছায়া থাকে তাহলে সব স্বপ্নের উড়ানই সম্ভবপর।
সুপার ৩০ স্বপ্ন দেখায়, প্রতি মুহূর্তেই কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে, “হাল ছেড়ো না বন্ধু। চেষ্টা করে যাও, ফল পেতে বাধ্য”। আমাদের আসে-পাশে মারণ রোগের মতো গজিয়ে ওঠা কোচিন সেন্টারগুলোর পড়াশোনার নামের “ব্যবসা”টা কেবলই “প্রিভিলেজড”দের জন্য। কিন্তু কেন? শিক্ষার অধিকার তো সবারই আছে। তাহলে সেখানেও “আমরা-ওরা” কেন? এই ছবি বারবার সেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে সমাজকে।
দীর্ঘ বছর এশিয়ার সেক্সিয়েস্ট ম্যান উপাধি পেয়ে আসা গ্ল্যামরাস হৃত্বিক তার খোলস থেকে বেরিয়ে যেভাবে নিজেকে ভেঙেচুরে আবার নতুন রূপে গড়েছেন, তা প্রশংসনীয়। চোখে লাগে পঙ্কজ ত্রীপাঠি, আদিত্য শ্রীবাস্তবের অভিনয়।
সঙ্গে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ৩০টি নতুন ছেলেমেয়ে, যারা সমানতালে নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে গেছে। সঞ্জীব দত্তের লেখা সংলাপ অনেকদিন মনে গেঁথে থাকবে। প্রেক্ষপটের সঙ্গে ছবির আবহ সঙ্গীত মানানসই। অনয় গোস্বামীর সিনেমাটোগ্রাফির কোনো তুলনা হয় না।
কিছু দৃশ্যে বলিউডি ছোঁয়া থাকলেও, এই ছবি সবার মনেই ভালোলাগার প্রলেপে জড়িয়ে রাখবে। কারণ কিছু ছবি আমাদের অজান্তেই দীর্ঘদিন মনের গভীরে রয়ে যায়। আসলে আমরা বড্ড স্বার্থপর, শুধুই নিজেরটা ছাড়া যেন কিচ্ছু বুঝি না। সমাজে হাতে গুনে আছে কয়েকটা মাত্র আনন্দ কুমার। আর আমরা তাদের উপরেই ভরসা করে পায়ের উপর পা তুলে বসে। কিন্তু কেন? শুরুটা আমরাই করি না।
আনন্দ কুমারও তো খুব সাধারণ। তথাকথিত সিনেমার হিরোদের মতো ভিলেনদেরকে এক ঘুষি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে না, না পারে নিজের প্রেমিকাকে অন্য কারোর সাথে বিয়ে করা থেকে আটকাতে। তাও তো সে পেরেছে। সেই কিন্তু জিতেছে। তবে আশা আছে। এরকম আনন্দ কুমার আরও তৈরি হবে। কারণ আনন্দ কুমাররা হারতে শেখেনি। হয়তো এখনও এই সমাজে “রাজাকা বেটাই রাজা হয়”, যেমনটা হয়েছিল মহাভারতের অর্জুন। কিন্তু সেই মানুষও রাজা হওয়ার ক্ষমতা রাখে যে সেটার “হকদার”।