কলকাতা: কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য এই নামটি লোক সঙ্গীতের জগতে অল্পদিনের মধ্যেই উজ্বল নক্ষত্রের মতো ব্রাজ করতে শুরু করে। ২০০৮ সালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত “মনের মানুষ” বাংলা ছায়াছবিতে তাঁর অনবদ্য লোকসঙ্গীত মন-প্রাণ ছুঁয়ে যায় বাংলার মানুষের। আকস্মিক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন কালিকাপ্রসাদ, কিন্তু বাংলা সঙ্গীত জগৎ তাঁকে ভোলেনি। ভুলে যায়নি তাঁর তৈরি ব্যাণ্ড “দোহার”।
তাঁর সৃষ্ট বাংলা লোকসঙ্গীতের ব্যাণ্ড “দোহার”-এর ২০ তম জন্মদিন উদযাপন শিশির মঞ্চে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “দোহার” সদস্যরা। এই উপলক্ষ্যে শিশির মঞ্চে দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেহারের সমস্ত উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডে পাশে থেকেছে পি.সি চন্দ্র গ্রুপ।
এদিন প্রথমার্ধের অনুষ্ঠানে দোহারের ২০ বছরের আড্ডা, এবং পরে দ্বিতীয়ার্ধের অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় বাংলার নানা উৎসব-পালা-পার্বণের নৃত্য-গীত সম্বলিত উৎসব-পরবের গীতি কথা -“বাংলার মুখ”।
দোহারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্যাণ্ডের ২৫ জন সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। “দোহার”-এর জন্ম ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত। কলকাতা শহরের কলেজস্ট্রিটে গোলদিঘির পাশে স্টুডেন্টস হলে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য একটি ছোট ঘরোয়া আসরের আয়োজন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো কালিকপ্রসাদের এক কাকা অনন্ত ভট্টাচার্যকে তারই সংগৃহীত গানের ডালি দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। সেখানেই জন্ম হয় “দোহার” লোকসঙ্গীতের ব্যান্ডের।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভীক মজুমদার দিয়েছিলেন দোহার নামটি। স্টুডেন্টস হলের ছোট্ট মঞ্চে কালিকা-রাজীব ছাড়া সেদিন ছিলেন নিরঞ্জন, যোগেন ঢাকি, বাবলু, সেবায়ন ও সুদর্শন। সেদিন একের পর এক ভাটিয়ালি, জারি, সারি, গাজন, মনসা মঙ্গল, ধামাইল ইত্যাদি পূর্ববঙ্গের শ্রীহট্ট অঞ্চলের গানে মাত করে দিয়েছিলো দোহার। অনুষ্ঠানের শেষে গামছা পেতে চাওয়া হয়েছিলো সেই অনুষ্ঠানের জন্যে আর্থিক সাহায্য। খরচের অনেক বেশি টাকা উঠে এসেছিলো সেদিন। তারপরেই পথ চলা শুরু দোহারের। এরপরেই দুরদর্শনে ডাক আসে দোহারের।
বন্ধু-বান্ধবদের অনুরোধে শিশির মঞ্চে প্রথম বারের জন্য অনুষ্ঠিত হল দোহারের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা। একে একে নানা ওঠা-পড়া, আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখের মাঝে কেটে গেছে কুড়িটা বছর। সেই দোহার আজ একটি মঞ্চসফল লোকগানের দল। দেশবিদেশে অবিভক্ত বাংলার লোকসংস্কৃতির প্রদর্শনের পাশাপাশি নানা লোকশিল্প ও শিল্পীকে সর্বসমক্ষে তুলে আনা অথবা নতুন প্রজন্মকে হাতেকলমে তার শিকড়ের সাথে পরিচয় ঘটানো – এ সবই দোহারের কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত।
এদিন অনুষ্ঠানে দোহারের যে গীতি-কথা অনুষ্ঠিত হয় তা ভারতের অন্যান্য শহরে দু-একবার হলেও কলকাতায় এই প্রথমবার হয়েছে। তাছাড়া দোহারের কুড়ি বছরের উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে আগস্ট-সেপ্টেম্বর জুড়ে একগুচ্ছ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সদস্যরা। এটি তার প্রথম ভাগ। মননে কালিকাপ্রসাদ কে সঙ্গে নিয়ে দোহার আছে তার রসিক বন্ধুদের অপেক্ষায়।