Date : 2024-04-26

অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদরে মিলল মৃত নক্ষত্রের দেহাবশেষ….

ওয়েব ডেস্ক: পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু যা সব সময়ই ঢাকা থাকে পুরু বরফের চাদরে, সেই অ্যান্টার্কটিকায় এবার এমনই একটি বরফের খণ্ড উদ্ধার হল যা দেখে চমকে উঠেছেন বিজ্ঞানীরাও। অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া গেল এই সৌরমন্ডল থেকে অনেক দূরে অজানা নক্ষত্রের ধ্বংসাবাশেষ। একেবারেই অবিকৃত অবস্থায় ছিল সেই নক্ষত্রের দেহাবশেষটি। অনেকের হয়তো মনে হবে এটা গল্প কথা।

এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’-এ। গত ১২ অগস্ট সংখ্যায়। দক্ষিণ মেরুর একটি স্থানে পুরু বরফের চাদরের নিচে পড়ে ছিল তেজস্ক্রিয় একটি লৌহ খন্ড। এই ধরনের তেজস্ক্রিয় বস্তু পৃথিবীতে একমাত্র পাওয়া যায় পরমানু অস্ত্রে। ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, সম্ভবত ২০ বছর আগে এই তেজস্ক্রিয় লৌহখন্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে।

এই বরফখন্ডটিকে উদ্ধার করে নিয়ে জার্মানির একটি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তাকে গলানো ও পরিস্রুত করার জন্য। তার পর গবেষকরা সেই গলানো ও পরিস্রুত বরফখণ্ডটিকে রেখেছিলেন একটি মাস স্পেকট্রোমিটারের নীচে। তার মধ্যে কী কী রয়েছে, তা জানা ও বোঝার জন্য। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লোহার এই আইসোটোপের নাম, আয়রন-৬০। এই লৌহখণ্ড পৃথিবীতে বিরল এবং অস্থায়ী। বরফখণ্ড থেকে পাওয়া লোহার আইসোটপগুলি অত্যন্ত তেজস্ক্রিয়।

কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, এইধরনের তেজস্ক্রিয় লোহা সহ ভারি পদার্থগুলর জন্ম হয় সুপারনোভা বা ভয়ঙ্কর সৌরজাগতিক বিষ্ফোরণের ফলে। খুব কম সময়ের মধ্যেই এগুলি ভেঙে অন্যান্য পদার্থে পরিনত হয়। জানাচ্ছেন, অ্যান্টার্কটিকার মতো জায়গায় এর আগে কখনওই এই ধরনের তেজস্ক্রিয় লোহার হদিশ মেলেনি।

তা-ও আবার সেই অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় লোহা উদ্ধার করা হয়েছে অ্যান্টার্কটিকায় সেই কোহনেন স্টেশন এলাকা থেকে, যেখানে বরফের উপরের স্তরটি ২০ বছরের বেশি পুরনো নয়। যা প্রমাণ করল, এখনও এই ধরনের তেজস্ক্রিয় লোহা এসে আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও সহমত হতে পারেননি একটি বিষয়ে, নক্ষত্রের দেহাবশেষ এসে পৃথিবীতে পড়েই যে লৌহার এই আইসোটোপ তৈরি হয়েছে তা নয়, পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র বা ধূলিকণার উপর মহাজাগতিক ধুলোবালিও এসে জমা হয়ে এই ধরনের এমন তেজস্ক্রিয় লৌহের জন্ম হতে পারে।

তবে কোন পারমানবিক অস্ত্রের অংশ যে অ্যান্টার্কটিকায় এসে পড়েনি সে বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা। তাহলে কি মহাজাগতিক ধুলিকণার কারণেই এই ধরনের লৌহ আকরিকের সন্ধান পাওয়া গেছে? সেই সত্য নিয়েই ধন্দে বিজ্ঞানীরা।