ওয়েব ডেস্ক: পরনে ছেঁড়া আধো ময়লা ছাপা কাপড়, মাথায় উশকোখুশকো চুল, হঠাৎ দেখলে স্টেশনের কোণে বসে থাকা কোনও মানসিক রোগগ্রস্ত মহিলা বলে ভুল হতে পারে। কিন্তু রূপের আগেও যে গুণ, তা আজকের দিনে দাঁড়িয়েও সর্বসত্য।
‘শোর’ ছবির মুকেশ-লতার গলায় সুপারহিট গান “এক প্যায়ার কা নগমা হ্য” গানটির দৌলতে প্রায় রাতারাতি ‘সেলিব্রিটি’ বনে গিয়েছেন রানাঘাটের এই মহিলা রাণু মারিয়া মণ্ডল।
কিছুদিন আগে ফেসবুকে তাঁর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে তার মধুর গলা শুনে চমৎকৃত সবাই। রানাঘাট স্টেশনে বসে বেশ অনেকদিন ধরেই গুনগুন করেন রাণু। কখন কখনও কেউ কোনও গান শোনানোর অনুরোধ করলে সেটাও গেয়ে শোনান।
এরকমভাবে শুনতে শুনতেই রাণাঘাট স্টেশনে তাঁর গান রেকর্ড করেছিলেন এক যাত্রী। পরে ফেসবুকে তিনি তা আপলোড করাতেই নিমেষের মধ্যেই রীতিমতো হিট। তবে এই গায়িকার জীবনটা খুব একটা সুখকর নয়। সবটা স্পষ্ট মনে পড়ে না। তবে যতটা মনে পড়ে সেটা হল তাঁর বাড়ি ছিল কৃষ্ণনগরের নতুনপাড়ায়। পরে তিনি রানাঘাটের বেগোপাড়ায় মাসির বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকেই বিয়ে হয়।
স্বামীর সঙ্গে চলে যান মুম্বই। আঠারো বছরের সংসার পাতেন। সেখানেই রয়েছে দুই ছেলেমেয়ে। ইতিমধ্যে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকায় তিনি ফিরে আসেন বেগোপাড়াতে। দু’টি ইটের ঘর আর একফালি বারান্দা নিয়ে তার এক তলা বাড়িতেই রাণু থাকেন ১২ বছর ধরে। তার মাসি থাকেন কলকাতায়। একা একা ঘরে মন খারাপ করে তার, তাই হাঁটতে হাঁটতে চলে যান রাণাঘাট স্টেশনে।
এতো ভিড়েও একা এই মহিলার একমাত্র সঙ্গী বলতে গান। সেই গান শুনে কেউ দু-চার টাকা দিলে সেটাই তার আয়, আবার কেউ কখনও খাবার কিনে দিলে ভরে পেট। এতেই চলে যায় জীবন। তবে শুক্রবার সন্ধ্যে রানাঘাটের বিডিও খোকন বর্মণ এক মহিলা অফিসারকে পাঠিয়েছেন তাঁর বাড়ি। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার ওঁকে এসে দেখা করতে বলেছি। দেখা যাক, ওঁর মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দেওয়া যায় কি না।’’ তবে রাণমুর অতো চাহিদা নেই, তার গান শুনে লোকে খুশি হলেই সেও খুশি।