ওয়েব ডেস্ক: কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকার পর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছিলেন, “ চলে গেলেন, মায়ের অষ্ট সখীর এক সখী চলে গেলেন”। খবর এসে পৌঁছলো দক্ষিণেশ্বরে, জানবাজারের ‘রাণিমা’ আর নেই। ১১ বছরের একরত্তি মেয়েটি বাবু রাজ চন্দ্র দাসের সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে পা রেখেছিলেন জানবাজারের রাজ বাড়িতে।
সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড সংলগ্ন জানবাজার রাজবাড়িতে প্রথম ১৭৭৮ সালে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন বাবু রাজচন্দ্র দাসের পিতা প্রীতরাম দাস মাড়। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে শ্বশুর ও স্বামীর অবর্তমানে রাজবাড়ির গৃহবধু রাসমণি দাসী থেকে রাণিমা হয়ে ওঠার কাহিনী ছিল এক অদম্য সহসী মাহিলার জীবনের অধ্যায়।
কৈবর্ত্যের রাণি ছিলেন তাই, প্রতিপদে সহ্য করতে হয়েছিল ব্রাহ্মণ সমাজের গঞ্জনা। পুরুষ শাসিত ভারতবর্ষে ও কলকাতার জমিদারির মানচিত্রে রাণি রাসমণি ছিলেন উজ্বল ব্যক্তিত্ব। ১৭৯০ সালে প্রথম কাছারি বাড়িতে পুজো করেন লোকমাতা রাণি রাসমণি। এখানেই নাকি ছদ্মবেশে এসেছিলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেব। তাও আবার মেয়েদের সাজে! শুধু তাই নয় ঠাকুরের সামনে পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলেন তিনি। চামর দুলিয়ে বাতাস করে পুজোর নানা কাজেও হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল রাণিমা এই জীবনের শেষ শারোদৎসব।
এরপর থেকেই এক এক জন মেয়ে এবং জামায়ের উপর দ্বায়ীত্ব পড়ে পুজোর। সেই থেকে রাণিমার অবর্তমানে আজও পুজো হয়ে আসছে জানবাজার রাজবাড়িতে। দেবীর গাত্রবর্ণ শিউলি ফুলের বোটার মতো। প্রকারভেদে বলা যায় তপ্তকাঞ্চনবর্ণ।একচালা সাবেকি প্রতিমার মুগ্ধ করার মতো রূপ। সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পুজিত হন দেবী।
এই মূল পূজা অনুষ্ঠিত হয় জমিদার প্রীতরাম দাস মাড়-র তৈরি পাঁচ খিলান ও দুই দালান বিশিষ্ট ঠাকুর দালানে। এখন অবশ্য পুজো হয়েছে ত্রিখণ্ডিত। আগে বলি প্রথা থাকলেও অনেকদিন আগেই তা বন্ধ হয়ে গেছে। সেদিনের কাছারি বাড়িতে আজও পুজো হয়। কাছারিবাড়ির পুজো দেখার জন্য প্রবেশ করতে হবে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের প্রবেশদ্বার দিয়ে।
পুজোর দায়িত্বে থাকে হাজরা পরিবার। এটি কলকাতার বিরল ভবন, যার ঠিকানা দুটি। একটি অংশ আছে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে। অন্যটি এস এন ব্যানার্জি রোডে। আর দুই প্রবেশ দ্বারে থাকে দুটি পুজো। এস এন ব্যানার্জী রোডের পুজোর দ্বায়িত্বে থাকেন চৌধুরী পরিবার আর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের প্রবেশ দ্বারে যে পূজো হয় তার দ্বায়িত্ব আছে হাজরা পরিবারের উপর। আবার এর উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে সুবিশাল বাড়িটি। যেখানে থাকতেন রাণিমা। সেখানেও একটি পুজো হয়, এই পুজোর দ্বায়িত্ব আছেন বিশ্বাস পরিবার। রাণিমার সেজো জামাই মথুরামোহন বিশ্বাসের পরিবারই এই পুজোর দায়িত্বে আছেন। ভাগ হয়েছে পুজো কিন্তু ভাগ হয়নি সাবেকিয়া আর ঐতিহ্য। রাজা নেই রাণি নেই, নেই ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। আছেন সনাতনী কাত্যায়নী দেবী দুর্গা।