Date : 2024-04-20

দীর্ঘ ১০ বছর শরীরে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র! রেকর্ড করলেন কলকাতার সন্তোষ দুগার….

কলকাতা: পেশায় শিল্পোদ্যোগী, ঠিকঠাকই চলছিল সব। কাজের চাপ অনিয়মিত জীবন ক্রমশই বিকল করে দেয় তাঁর হৃদযন্ত্রটিকে। ওষুধ, শল্যচিকিৎসা এসব এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ডাক্তারদের পরামর্শ ছিল হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করার। চিকিৎসকদের নিদান শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছিল কলকাতার বাসিন্দা সন্তোষ দুগার। সময়টা ২০০৯ সাল কৃত্রিম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর শরীরে। সেই থেকে টানা ১০ বছর, শরীরে কৃত্তিম হৃদযন্ত্র নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি। শুধু কলকাতায় নয় সারা দেশে এখন কৃত্রিম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে।

হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন কি?

হৃদপিন্ডে স্পন্দনের অসংগতি ধরা পড়লে হৃদযন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় কৃত্রিম হৃদযন্ত্র। স্পন্দন উৎপাদনকারী যন্ত্রের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের সংযোগ রক্ষার জন্য থাকে একাধিক তার বা লিড। ডাক্তাররা বলেন, যন্ত্রটি বসানোর পরে নিয়ম মেনে চললে, সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট বা হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন সম্ভব না হলে, কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসিয়ে হার্ট সচল রাখা যায় অনেক বছর। সাধারণত, লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস (LVAD)সবচেয়ে বেশি দিন কার্যক্ষম থাকে। কার্ডিওলজিস্টরা বলেন, এই যন্ত্র ঠিক ভাবে কাজ করলে এবং রোগী নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকলে, তার মেয়াদ থাকে ৫-৭ বছর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সেই রেকর্ডকে ছাপিয়ে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ্য ভাবেই বেঁচে আছেন সন্তোষ দুগার। তাঁর বেঁচে থাকা হার্টের রোগীদের কাছে অবশ্যই নতুন আশার বার্তা। বর্তমানে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের ঘটনার সাক্ষী রয়েছে শহর। অনেক সময় দেখা যায় রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে অথচ সুস্থ্য রয়েছে তাঁর হার্ট। সেই অবস্থায় সুস্থ্য হার্ট হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন এমন ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম আছে যেমন দাতা ও গ্রহীতার ব্লাডগ্রুপ্র এক হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলেই কৃত্রিম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।

ভারতে প্রথম চেন্নাইতে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র Artificial Heart Pump-এর সফল প্রতিস্থাপন করা হয় ২০১২ সালে। ৫৮ বছরের এর রোগীর দেহে হার্টমেট-২ এলভিএডি HeartMate-II LVAD” (Left Ventricular Assist Device) বসান কার্ডিওলজিস্টরা। সেই সময় অবশ্য হার্টমেটের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। আগে বিদেশ থেকে কোটি টাকা দিয়ে আনানো হত এই বিশেষ যন্ত্র। ২০১৮ সালে সেই খরচ কমে গিয়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকা হয়। শুধু চেন্নাই নয় কলকাতাতেও এখন সাধ্যের মধ্যেই এই অস্ত্রপচার করা সম্ভব করার চেষ্টা চলছে।