Date : 2024-04-26

#দেবী কাত্যায়নী: দৈত্যরাজকে দমন করতে দেবতারা আরাধনা করেছিলেন

‘কাত্যায়নীং দশভুজাং মহিষাসুরঘাতিনীং

নমামি বরদাং দেবীং সর্বদেবনমস্কৃতাম্।’

দেবী কাত্যায়নী

বীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহে লিঙ্গের উত্তর-পূর্বকোণে দেওয়ালের নিচে দেড় হাত একটি কুলুঙ্গিতেই অধিষ্ঠান শরৎ ও বসন্তকালের শুক্লা ষষ্ঠীতে দর্শনীয়া দেবী কাত্যায়নীর। বীরেশ্বর লিঙ্গরূপায় নরমুণ্ডমাল্যশোভিত গৌরিপট্ট-ঘেরা কুণ্ডের মধ্যে বিরাজিত। তাঁর উত্তর-পূর্ব কোণে দেবী বিরাজিতা। হাত খানেক উঁচু দেবী সিংহের পিঠে দক্ষিণ চরণ ও মহিষাসুরের কাঁধে বাম চরণ স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছেন। অষ্টভুজা কালো পাথরের বিগ্রহ। ডান হাতের ত্রিশূল অসুরের বুকে গেঁথে আছে, অন্য হাতের কোন অস্ত্রাদিই বোঝা যায় না। সব ক্ষয়ে গিয়েছে। সবসময় যাত্রীভক্তরা জল দেওয়ায় দেবীর শরীর সব সময়ই পিছল হয়ে থাকে। শিবশক্তির একত্র সমাবেশ। এইসব ছোট ছোট মন্দিরে দেবীদের অবস্থান দেখে মনে হয়ে কোন সময় অত্যাচারীদের হাত থেকে বিগ্রহদের রক্ষা করবার জন্য পূজারীরা তাঁদের নিজেদের বাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। মন্দিরগুলি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে সেই সব দেবী বা দেবতাদের বিগ্রহগুলি আর স্ব-মন্দিরে ফিরে যেতে পারেননি। ঐ গৃহস্থ পূজারীর বাড়িরই কোনো অংশে বা কোনো মন্দিরের একপাশে তাঁদের ঠাঁই হয়েছিল। এই বীরেশ্বর ও কাত্যায়নী মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে চত্বরের পাশে মঙ্গলেশ্বর ও বুধেশ্বর শিবলিঙ্গ আছেন ছোট ছোট কুণ্ডের মধ্যে। মন্দিরের দক্ষিণ দেওয়ালে তিনমুখ দত্তাত্রেয় আছেন,গণেশ আছেন,আর একেবারে প্রবেশপথের বাঁ দিকে ছোট ঘরে আধুনিক দেবতা সন্তোষী মা আছেন।

এই দেবী কাত্যায়নীর উদ্ভব হিমালয়ে কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে। ঋষি কাত্যায়ন কাত্য গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী অম্বিকাকে তাঁর কন্যা হিসাবে পাওয়ার জন্য। দেবী তাঁর তপস্যায় প্রসন্না হয়ে সেই প্রার্থনা স্বীকার করে বলেছিলেন, দেবতাদের প্রয়োজনে আমি তোমার তপোবনে আবির্ভূত হয়ে তোমার সেবা গ্রহণ করব।

এরপরে দৈত্যরাজ মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা কাতর হয়ে একত্রে মহাশক্তির আরাধনা করবার সময় তাঁদের ক্রোধসঞ্জাত তাপ ও তেজ একত্রিত হয়ে এক অপরূপা দেবীমূর্তির সৃষ্টি হয়েছিল। দেবীকে দেবতারা নিজেদের অস্ত্র থেকে অস্ত্রাদি দিয়েছিলেন অসুর নাশ করতে। ইনি নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ, যিনি মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পুজিত হন। যুদ্ধং দেহি রূপ এই দেবীর। তপ্ত কাঞ্চনবর্না, দশ হাত বিশিষ্ট হয়ে ইনি বাংলায় দেবী দুর্গা রূপে পুজিত হন ষষ্ঠী থেকে দশমী এই চার দিন ব্যাপী। কাত্যায়নী দেবী দুর্গার আদি রূপ। শ্রী শ্রী চন্ডিতে, কালিকা পুরানে, মার্কেন্ডেয় পুরানে, বিষ্ণু পুরানে দেবী কাত্যায়নী সম্পর্কে বিবিধ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।