দেবী মহাগৌরী
শেষ হয়েছে নবরাত্রী ব্রত। আজ দেশ জুড়ে পালিত হবে দশেরা। ত্রেতা যুগে এইদিনেই রামচন্দ্র রাবণকে বধ করতে উদ্ধার করেছিলেন সীতাকে। আবার পুরাণে বর্ণিত আছে বসন্তকালে শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতেই দেবীদুর্গা মহিষাসুরের দর্প চুর্ণ করেন ও বধ করেন। তাই বিজয়া দশমী হল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়লাভের দিন। নবরাত্রী ব্যাপী দেবীর নয়টি রূপের পুজো করে তবেই রামচন্দ্র রাবণের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। অষ্টমী তিথিতে যে দেবীর পুজো হয় তাঁর নাম দেবী মহাগৌরী। দেবী দূর্গার অষ্টমী বিহিত রূপের পূজা হয়।
মহাগৌরী হচ্ছেন কাশীর অন্নপূর্ণা দেবী, যাঁর কাশীখণ্ডের নাম ভবানী।
মহাগৌরীর মন্দিরে প্রবেশকরে সামনেই বারোটি নানা অলংকার খোদাই করা সুন্দর লাল পাথরের স্তম্ভের উপর নাটমন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে। নাটমন্দির তিনদিক খোলা। সাদা-কালো মার্বেল পাথরের মেঝে। এখান থেকেই ভক্তদের সামনের ছোট্ট গর্ভমন্দিরে অধিষ্ঠিতা মা অন্ন্পূর্ণাকে দর্শন করতে হয়। সিলিং থেকে ঝুলছে ছোট ঘণ্টা। গর্ভমন্দিরের তিনটি ছোট ছোট দরজা।
মা বেদীর ওপর বিরাজ করেছেন, পশ্চিমাস্যা, ফুট দুয়েক মতো উঁচু, সর্বাঙ্গ বস্ত্রবৃতা। মুখখানি শুধু একটি সোনার মুকুটসহ মুখোশ দিয়ে আবৃত। মুকুটের পিছনে আসল মূর্তির মাথায় চূড়াটি দেখা যায়। তার ওপর হলুদ-চন্দন-আলোচাল দূর্বাদিয়ে একটি অর্ঘ্য সকালেই স্নান পূজোর পরে দিয়ে রাখা হয়। দেবীর আসলমূর্তি কালো কষ্টিপাথরের। কোন কোন দিন খুব ভোরে চারটে সাড়ে চারটেয় এলে সেই মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। পূজারীরা দরজা বন্ধ করে স্নান-পূজা-বস্ত্রপরিবর্তন করিয়ে দরজা যখন খোলেন সেসময় মায়ের খোলামুখখানি দেখতে পাওয়া যায়। একখানি আড়াই হাত মতো পাথরের স্ল্যাবে দেবীর মূর্তি রিলিফের মতো খোদাই করা আছে। দেবী দাঁড়িয়ে আছেন। দুই হাতের একটিতে হাতা, অন্য হাতে ছোট হাঁড়ি। সবই পাথরের। মায়ের মাথায় চূড়ার মতো করে চুল বাঁধা। মুখখানি অপূর্ব। চোখে অন্য সব প্রতিমার মতো সাদা শঙ্খ বা কোন ধাতু নেই। একেবারে খোলা চোখ।
এতো প্রশান্তি করুণামাখা মুখ মায়ের, দেখে আশ মেটে না। এই চূড়ার ওপরই হলুদ চন্দন এই সব দিয়ে রোজ একটি অর্ঘ্য সাজিয়ে রাখা হয়। সেটি বিশ্রাম পর্যন্ত থাকে। একটু পরেই মুখে কোনোদিন সোনা কোনোদিন রুপোর মুখোশ লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপরে নানাফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়। দেবীর আসনের নিচে একটি অষ্টধাতুর দেবী যন্ত্র আছে। বিশেষ দিনে সেটি বাইরে আনা হয় কুঙ্কুম অভিষেক করার জন্য। দেবীর গর্ভমন্দিরে তাঁর সামনে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি ধাতুময়ী দীপধারিণী মূর্তি আছে। যাঁরা জানেন না, তাঁরা মনে করেন এটি বুঝি বাবা বিশ্বনাথের মূর্তি। কিন্তু এখানে সবসময়ের জন্য ভিখারী শিবের কোনো মূর্তি থাকে না। বিশেষ বিশেষ পর্বে দেবীর যখন বিশেষ বিগ্রহ নামিয়ে সাজানো হয় তখনই রুপোর শিবও সাজিয়ে দেওয়া হয়।