Date : 2024-04-25

ফিরে দেখা ২০১৯ : পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চন্দ্রঅভিযান থেকে অর্থনীতিতে ভারতের নোবেল জয় বছরশেষের প্রান্তে একনজরে ফিরে দেখা যাক দেশের নানা প্রান্তের খবর

ওয়েব ডেস্ক : ১৯ পেরিয়ে ধীরে ধীরে ২০ র দিকে পা বাড়াচ্ছে বিশ্ব। পিছনে ফেলে আসা ১৯ এর জাতীয় স্তরের নানান খবরাখবর দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

১. বছরের শুরুতেই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল পুলওয়ামা। পাক জঙ্গিদের আত্মঘাতী বিস্ফোরণে শহিদ হলেন ৪৪ জন জওয়ান। বিস্ফোরণের দায় শিকার করে জৈশ ই মহম্মদ গোষ্ঠী। এই হামলার পর পাল্টা হিসেবে প্রত্যাঘাত চালায় ভারতীয় সেনা। নিয়ন্ত্রনরেখার ভিতরে ঢুকে পাকঅধিকৃত কাশ্মীরের প্রায় ৮০ কিমি ভেতরে বালাকোটে জবাবি হামলা করা হয় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিঘাঁটিতে।

২. পাক সমর্থিত কাশ্মীরের বালাকোটের জঙ্গি ঘাটিতে হামলার সময় ভেঙে পড়ল ভারতের মিগ ২১ বিমান। পাক সেনা হাতে বন্দি হতে হয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে। সেনা হেফাজতে তাঁর ওপর চালানো হয় মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। তবে ভারতের কূটনৈতিক চালে এবং জেনেভা কনভেশনের নিয়ম অনুযায়ী উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরাতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। ১লা মার্চ রাত ৯.২০ মিনিটে ওয়াঘা আটারি সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। তাঁর এই সাহসিকতাকে সামনে রেখে অভিনন্দনকে বীর চক্র সম্মানে ভূষিত করা হয়।

৩.বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বারের জন্য সরকার গঠন করল বিজেপি। ২০১৪ লোকসভার তুলনায় এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে কেন্দ্রে সরকার গঠন করল বিজেপি সরকার। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত রায়বেরেলিতে পরাজিত হন কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল গান্ধী। স্বপ্নভঙ্গ হয় বিরোধী জোটের। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে শপথ নেন অমিত শাহ। তবে বছর শেষে মহারাষ্ট্র নির্বাচনে শিবসেনা কংগ্রেস এবং এনসিপির জোটের কাছে হার মানে বিজেপি।

৪. দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তিনতালাক নিয়ে লোকসভায় ‘দ্য মুসলিম উইমেন প্রটেকশন রাইটস অন ম্যারেজ’ বিল পেশ করেন রবিশঙ্কর প্রসাদ।সংসদের বাদল অধিবেশনে তাৎক্ষনিক তিন তালাককে বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়।

৫. ৫ ই আগস্ট লোকসভায় পেশ করা হল বিশেষ সংশোধনী বিল। যে বিলে জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর থেকে তুলে নেওয়া হল সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ A ধারা। জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে গড়ে তোলা হল পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ। বাতিল করে দেওয়া হয় কাশ্মীরের পৃথক পতাকাও। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে কাশ্মীর। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। গৃহবন্দি করা হয় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যন্য নেতাদের। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা।

৬. ৩১ শে অগস্ট প্রকাশিত হল আসামে আনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। তালিকা থেকে বাদ পড়লেন ১৯ লক্ষ মানুষ। তালিকায় নাম উঠল ৩ কোটি ১১ লক্ষ ২১ হাজার মানুষের নাম। বিপুল সংখ্যক হিন্দু নাগরিকের নাম বাদ যাওয়ায় সমস্যায় পড়ে বিজেপি। তাই নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে অমুসলিমদের নাম রাখার পরিকল্পনা করে মোদী সরকার।যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের আকার নেয় আসামে।

৭.কয়েক দশকের অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তি হল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। টানা ৪০ দিনের শুনানির পর ৯ ই সেপ্টেমবর রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে বির্তকিত জমিতে মন্দির বানানো পক্ষে রায় দেয় শীর্ষ আদালত। এবং তার পাশাপাশি মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়া মন্দির তৈরির ক্ষেত্রে ট্রাস্ট গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের তরফে।

৮. বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে এল কেন্দ্রীয় সরকার। বহু বিতর্ক আলোচনা পর লোকসভা এবং রাজ্য সভায় পাশ করা হল এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর সেই বিল পরিণত হয় আইনে। রায়ের বিরোধীতা করে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। উত্তর পূর্বের একাধিক রাজ্য সহ জ্বলতে শুরু করে গোটা দেশ। উত্তর প্রদেশে প্রাণ হারায় বহু সংখ্যক মানুষ । দেশজুড়ে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। সেই উত্তাপ এখনও অব্যাহত।

৯. নির্ভয়া কান্ডের স্মৃতি ফের উঠকে দিল ২৭ নভেম্বরের ভয়াবহ ঘটনা। তরুণী পশু চিকিৎসককে পুড়িয়ে গণধর্ষনের ঘটনা ঘটল হায়দ্রাবাদের সামশাবাদে। ধর্ষণে অভিযুক্ত ট্রাক চালক সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ ই ডিসেম্বর ঘটনার পুর্ননির্মানের চেষ্টা করা হয়। তবে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং তাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগও তোলে পুলিশ। নিজেদের আত্মরক্ষার্থে পুলিশি এনকাউন্টারে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। অপরদিকে উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে ১৬ ই ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দোষী সাবস্ত্য করে বিজেপির প্রাক্তন এমএলএ কুলদীপ সেঙ্গারকে। যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে।

১০. ২২ শে জুলাই চাঁদের দেশে পাড়ি দিল চন্দ্রযান ২। তবে মহাকাশে পৌছলেও চাদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং করতে অসমর্থ হয় ল্যান্ডার বিক্রম।

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতের এই মহাকাশ অভিযানকে অভিনন্দন জানায় নাসা। তবে চাদের মাটিতে ল্যান্ডিং অসফল হলেও ২০১৯ এ  আশার আলো দেখালেন অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।  অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিনি। দারিদ্র দূরীকরণে বিকল্প পথের সন্ধান দিয়েছেন অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী এস্থার ডুফলো।