ওয়েব ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি যখন ‘স্মার্ট ইন্ডিয়া ২০২০’-র ডাক দিয়ে দেশের শিক্ষিত নবীন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন তখন তিনি কি জানতেন যে, পৃথক খালিস্তান গড়ার লক্ষ্যে খালিস্তানিরাও ‘#রেফারেন্ডাম ২০২০’-র ডাক দেবে? পাঞ্জাবের রাজ্যপাল হিসাবে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের দক্ষ পরিচালনায় আইপিএস অফিসার রেবেইরো এবং কেপিএস গিল ওই রাজ্য থেকে খালিস্তানিদের নাম ও নিশানা ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) খালিস্তান ডেস্কটাকে তো তাঁরা আর তুলে দিতে পারেননি। তার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধঘোষণার দরকার ছিল। আইএসআইয়ের গেমপ্ল্যানারদের তৈরি মানচিত্রে ভারতের চেহারাটা খণ্ডবিখণ্ড। সেখানে পৃথক পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে গঠিত হয়েছে খালিস্তান, বঙ্গস্তান, কলিঙ্গ, রাজপুতানা, হায়দরাবাদ, কাশ্মীর ইত্যাদি। সিআইএ অফিসার মেজর কুপল্যান্ডের ‘অপারেশন বলকানাইজেশন’। পাকিস্তানের সামরিক উর্দির পোষা কুকুরদের হাতে তা তুলে দিয়ে আমেরিকায় ফিরে গিয়েছিলেন। দেহরক্ষী সতবন্ত ও বিয়ন্ত সিং ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করার পর ১৯৮৪ সালের দিল্লি দাঙ্গায় বহু শিখ নিহত হন। টাইটলার, গ্যাডগিল সহ সঞ্জয় গান্ধীপন্থী কংগ্রেসের একাধিক নেতা সেই মামলায় অভিযুক্ত হন। ওই ভয়াবহ দাঙ্গার সুযোগ নিয়ে আইএসআইয়ের মদতপুষ্ট খালিস্তানিরা কানাডা, ব্রিটেন, আমেরিকার মতো উন্নত দেশে পৃথক খালিস্তান গড়ে তোলার জন্য নতুন করে প্রচার চালানোর সুযোগ পায়। #রেফারেন্ডাম ২০২০-র ধুয়ো তুলে তাদেরই স্লিপার সেলগুলো দু-তিন পুরুষ বাদে জেগে উঠেছে। কারা তাদের জাগিয়ে তুলল? পাঠানকোট এয়ারবেসে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পর জানা গেল, গোটা পাঞ্জাব নারকোটিক আর অস্ত্র চালানের স্বর্গরাজ্য।
পাকিস্তান সীমান্ত দিয়েই সেসব ঢুকছে। ভিন্দ্রানওয়ালে ও তার জঙ্গি বাহিনীকে খতম করতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরে অপারেশন ব্লু স্টারের পর কলকাতায় এসপ্লানেড ইস্টে (অধুনা সিধো-কানহ ডহর) সুনীল গাভাসকরের মতো সাদা টুপি পরে ধরনায় বসেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ১৯৪৬ সালে মনুমেন্টের নীচে মহম্মদ আলি জিন্নাদের “ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে”-র মঞ্চেও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ওই মিটিংয়ের পর গ্র্যান্ড হোটেলের তলা থেকে শুরু হয়ে যায় ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’। ৪৮ ঘণ্টা ধরে শহরে দাঙ্গার আগুন জ্বলার পর ফোর্ট উইলিয়াম থেকে গোরা পল্টন বেরিয়েছিল। ‘বঙ্গেশ্বর’ মহান ব্যক্তি ছিলেন। কাদের ঠেলা খেয়ে খালিস্তানিদের তুষ্ট করতে এসপ্লানেড ইস্টে তিনি ধরনায় বসেছিলেন, তা তাঁর ঘনিষ্ঠরাই বলতে পারবেন।
পরবর্তীকালে সল্ট লেকে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহায়কের সহধর্মিণী বিশাল স্কুল খোলেন। তাক লাগানোর মতো অট্টালিকা। কারা তা বানাতে পয়সা দিয়েছিল, কেউ জানে না। ২০১৮ সালের আগে থেকেই এদেশে নতুন করে খালিস্তানিরা সক্রিয়। তার আগে ২০১৬ সালে ইতালিতে দুজন খালিস্তানি ধরা পড়ে। তাদের জেরা করে বিলেত ও কানাডায় খালিস্তানি সক্রিয়তার খবর মেলে। বিলেতের চাইতে কানাডায় পয়সাওয়ালা খালিস্তানিদের দাপট বেশি। এ বছর সেদেশে ভিন্দ্রানওয়ালের বিধবা স্ত্রীকে সামনে রেখে ‘#রেফারেন্ডাম ২০২০’-র সমর্থনে সমাবেশ হয়। বহু তরুণী সেখানে উপস্থিত ছিল। কিছু দিন বাদে একই ব্যাপার ঘটে লন্ডন ও অস্ট্রেলিয়ায়। আমাদের রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের এলিমেন্টদের পোষা চামচা পঞ্চম বাহিনীর অভাব নেই।
টাকাপয়সা দিলে তারা সব কিছু করতে পারে। এক সময় যারা এলটিটিই নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে মদত দিত সেই করুণানিধির ডিএমকে পরে সোনিয়া কংগ্রেসের বন্ধু হয়ে যায়। রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল দক্ষিণী এই রাজনৈতিক দল পরবর্তীকালে কংগ্রেস-পরিচালিত ইউপিএ সরকারের শরিক হয়েছিল। দিল্লিতে মন্ত্রিত্বও পেয়েছিল। তার কারণ, সোনিয়া গান্ধী যেমন তামিল নেত্রী কুমারী জয়ললিতাকে সহ্য করতে পারতেন না তেমনই সোনিয়া গান্ধী ছিলেন ‘আম্মা’র দুচোখের বিষ। অর্থাৎ, রাজনীতিতে সবই সম্ভব। তাই প্রশ্ন জাগে, স্মার্ট ইন্ডিয়া ২০২০ আর পৃথক খালিস্তানের দাবিতে #রেফারেন্ডাম ২০২০ কি নেহাত কাকতালীয়?