ওয়েব ডেস্ক : শিশু ও নাবালক-নাবালিকাদের উপর যৌন অত্যাচার বন্ধে কেন্দ্র পকসো আইন পাশ করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে সেই আইন প্রণয়নে অদ্ভূত একটা অসাড়তা লক্ষ করা যায়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে আরম্ভ করেছেন। তাঁরা বলছেন, একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় এখনকার ভারতে যতটা ঝড় উঠতে দেখা যাচ্ছে শিশু ও বালক-বালিকাদের উপর যৌন অত্যাচার নিয়ে কেন ততটা ঝড় উঠছে না। শুধু ফুঁপিয়ে কান্না আর মোমবাতি মিছিল ছাড়া ভারতের প্রতিবাদীদের আরও অনেক কিছু করার ছিল। তাঁরা অন্তত আন্তর্জাতিক স্তরেও এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতেন। বিশেষ করে এ প্রশ্নও বলতে পারতেন, একটা আইন হল। তার বাস্তব প্রয়োগ কোথায়? নাকি তাঁরাও এসব ঘটনা ভারতের মতো পিছিয়ে-পড়া দেশে ‘টেকন ফর গ্র্যান্টেড’ বলে ধরে নিয়েছেন? কারনাল ডিজায়ারের বিকৃত রূপ এক ভয়াবহ ব্যাপার। বহু শিশু ও বালক-বালিকাই যৌন নিপীড়নের শিকার হয় নিজের পরিবারে।
ভারতের মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন দেশগুলিতে এমন বিকৃত ধারণাও অনেক কমিউনিটিতে রয়েছে যে, শিশু কিংবা বালক-বালিকাদের নিয়ে যৌন-ক্রীড়া করলে অনন্ত যৌবনের অধিকারী হওয়া যায় এবং অপার ক্ষমতা ভোগ করা যায়। তাছাড়া এ রকম বিকৃত ধারণাও অনেকের মধ্যে রয়েছে, শিশুদের সঙ্গে যৌন ক্রীড়ার মাধ্যমে তাদের খুব তাড়াতাড়ি স্মার্ট এবং বড় করে তোলা যায়। আর তাদের উপর অত্যাচার করে টুঁটি টিপে মেরে দিলেও ক্ষতি নেই। দশ মাস দশ দিনে আরও একটি শিশুর জন্ম হবে। বিলেত-আমেরিকা-জার্মানিতেও এমন অনেক সিক্রেট সোসাইটি রয়েছে যারা এসব তত্ত্বের বাস্তব চর্চায় বিশ্বাসী। কিন্তু ওই সব দেশে তাদের অন্ধকারের জীব হিসাবেই গণ্য করা হয়। ভারতের মতো দেশে এই ধরনের বিকৃতমস্তিষ্করা সমাজের গণ্যমান্য বলে পূজিত কিংবা পূজিতা হন। শিশুদের উপর অত্যাচার বন্ধে একটা আইন হওয়ার পরেও ভারতে কেন দ্রুততার সঙ্গে তার প্রয়োগ হচ্ছে না, এতেই আন্তর্জাতিক স্তরের বহু আইনবিদ এবং প্রাক্তন পুলিশ অফিসার আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন।
তাঁরাই প্রশ্ন তুলছেন, দিল্লির নির্ভয়া কিংবা হায়দরাবাদ-উন্নাওয়ের মতো বীভৎস ঘটনা নিয়ে অবশ্যই তোলপাড় হওয়া উচিত। কোনও মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে নিশ্চয়ই আন্দোলন হবে। তাতে রাজনৈতিক ফয়দার আশাও আছে। কিন্তু পকসো-র মতো আইন কেন প্রয়োগ করা হচ্ছে না, এই দাবিতে আন্দোলন হলে কি আরও বেশি রাজনৈতিক ফয়দা হত না? কেন রাজ্যে রাজ্যে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনায় পুলিশ কেসের পরেও তা নিয়ে কোনও সর্বাত্মক আন্দোলন হচ্ছে না? তাহলে কি ধরে নিতে হবে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন নিয়ে ভারতের মতো দেশে বেশি মুখ খুললে কোনও কোনও ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী মহলের প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে? এই ধরনের বুনো কুকুর ও নেকড়ে-হায়নার পালের দ্রুত সদগতির জন্য কি এ দেশের ‘চিন্তাশীল’ সমাজসেবী ও রাজনৈতিক শক্তির আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল না? আন্তর্জাতিক স্তরে সে ব্যাপারে কি তাঁদের ঘন ঘন মুখ খোলার প্রয়োজন ছিল না? নাকি কোনও কোনও যৌন চক্রের অবসান ঘটলে তাঁদেরও আর্থিকভাবে ক্ষতি হতে পারে?