Date : 2024-04-26

দৈত্যরা হোটেলের মতো রথ তৈরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রায়গঞ্জে হুঙ্কার মমতার

রাজ্যে তৃণমূল জমানার অবসান ঘটাতে জেলায়-জেলায় চলছে বিজেপির পরিবর্তন যা্ত্রা। নবদ্বীপ, তারাপীঠ, লালগড় থেকে ইতিমধ্যে সেই যাত্রার সূচনা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে এমনই একটি পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভোট বাংলায় বিজেপির এই রথযাত্রা কর্মসূচিকেই বুধবার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ আসনে জয়ী হন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী। কেন্দ্রে তাঁকে মন্ত্রীও করা হয়েছে। লোকসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ দেখা যাচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল পেয়েছিলেন ৪,৫১,০৭৮টি ভোট। শতাংশের বিচারে ৩৫.৭০। অন্যদিকে জয়ী প্রার্থী দেবশ্রী পেয়েছিলেন ৫,১১,৬৫২টি ভোট। প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০.৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ৬০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। বিধানসভা ভিত্তিক ফল বলছে ইসলামপুর, গোয়ালপোখর ও চাকুলিয়ায় বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু করণদিঘি, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। বিধানসভা ভোটে ৩-৪ ফলের এই ব্যবধানই মুছে ফেলতে মরিয়া তৃণমূল সুপ্রিমো। ২০১৬ সালের লোকসভা ভোটে সার্বিকভাবে উত্তর দিনাজপুর জেলার ৯টি আসনের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বাকি ৫টি পেয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা। আসন্ন বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা ধরে রাখতে উত্তর দিনাজপুরের ৯টি আসনকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রায়গঞ্জে জনসভার মঞ্চ থেকে তাঁর আর্জি, আমার টাকা নেই, তবে ভালোবাসা দিয়ে আপনাদের মন জয় করে নেব। জনগণের কাছে ফের আর্জি জানান তাঁর উপর ভরসা ও বিশ্বাস রাখার জন্য।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপিকে বিঁধতে তাদের পরিবর্তন যাত্রা বা রথযাত্রা কর্মসূচিকেই নিশানা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, রথবাবুরা চলে এসেছেন। নিজেদের জগন্নাথদেব, শ্রীকৃষ্ণ ভেবে সেই বেনামি রথযাত্রায় ঘুরে বেড়া্চ্ছেন বিজেপি নেতারা। দৈত্যরা হোটেলের মতো রথ তৈরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাম-রাবণের লড়াইয়ে বিজেপি যে রাবণ তা বোঝাতে মমতা বলেন, ভুলে গেলে চলবে না এই রথে করেই সীতাকে হরণ করেছিল রাবণ। জগন্নাথদেবের রথযাত্রা, মহাভারতের যুদ্ধে অর্জুনের রথে শ্রীকৃষ্ণের সারথি হওয়া দেশবাসীর কাছে ধর্মীয় আবেগের প্রতিরূপ। সেই আবেগকে উসকে দিয়েই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, রথযাত্রার নামে যাত্রা হচ্ছে। বিঁধেছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নেতাদেরও। তাঁর কথায়, কিছু ভুঁইফোড় নেতা আখের গুছিয়ে পালিয়েছে। এখন যারা নিজেদের বাঘ মনে করছেন পরে তারাই ইঁদুরে পরিণত হবে। একইসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, কারও কাছে মাথা নত করে টিকিট দেওয়া হবে না। দেশের নেতা কেমন হওয়া উচিত তা বোঝাতে এদিনও মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি, আবুল কালাম আজাদ, আম্বেডকরের মতো নেতাদের কথা স্মরণ করেন মমতা। সোনার বাংলা গড়ার নামে বিজেপি নেতারা যা বলছেন তা যে কথার কথা ও ভাঁওতা তা বোঝাতে মমতা বলেন, আমার উপর বিজেপির খুব রাগ, তাই আমাকে সরিয়ে দিয়ে বাংলা চালাতে চায়। বাম, কংগ্রেস, বিজেপি এক হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এইসব রাজনৈতিক বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্যও রয়েছে। বাম নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যে খাল কেটে কুমির এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। বিজেপি ও তৃণমূল অভিন্ন হৃদয়, একে অপরের পরিপূরক। আসলে নকল যুদ্ধ চলছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। আর বিজেপি বলছে, বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে তৃণমূলেরই। তিন দলের মধ্যে ম্যাচ ফিক্সিং হয়েছে। সবমিলিয়ে তেতে উঠছে বঙ্গ ভোটের রাজনীতি।