Date : 2024-04-16

কমরেডরা শুনছেন? সময় কিন্তু দ্রুত ধাবমান, একটু পা চালিয়ে কমরেড!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, ইনপুট এডিটর : কেরল বিধানসভা ভোটে দুই তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে সিপিএম। আর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে তারা একটি আসনও জিততে পারে নি। ২০১১ সালে ক্ষমতা হারানোর নির্বাচনে সিপিএমের ভোট ছিল ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। আর মাত্র দশ বছর পরে তার প্রাপ্ত ভোট ৪.৭ শতাংশ। কেরলে প্রথম আর পশ্চিমবঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ার কারন নিয়ে চর্চা চলছে। এই চর্চার যথেষ্ট গুরত্ব রয়েছে তার কারন বিষয়টা সিপিএম নামে একটি দলের হারজিতের গণ্ডিতে আটকে নেই। এটি বামপন্থার অস্তিত্বের সংকট । তাই বিষয়টি নিয়ে অমর্ত্য সেন তাঁর ভাবনার কথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু সিপিএমই এখনও সবচেয়ে বড় বামপন্থী দল তাই তাদের সামনে রেখেই আলোচনা চলছে।

প্রতি ভোটের পরে যা হয় সেভাবেই নির্বাচনের ফল নিয়ে সিপিএম এর রাজ্য কমিটিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক সেই আলোচনায় আই এস এফ কে নিয়ে মোর্চা গঠন করার জন্যই ফল খারাপ হয়েছে বলে দলের রাজ্য কমিটি মনে করছে। ২০১৯ এ লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম একা লড়েছিল। প্রায় সব আসনেই সিপিএম প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছিল। সেই ফল ধরে হিসেব করলে ২৯৪ টি আসনের একটিতেও বামপন্থীরা এগিয়ে ছিল না। অতএব যারা বলছেন আই এস এফ কে নিয়ে ফ্রন্ট গঠনেই সিপিএম শূন্য হয়েছে তারা ভাবের ঘরে চুরি করছেন। এই রাজ্যে সিপিএম যে খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে।

কিছু কম বয়সিকে সামনে এগিয়ে দিয়ে কিছু গোঁজা মিল দিয়ে গভীর সংকট থেকে পরিত্রান হবে না। বাম রাজনীতি মানে বহু দিকনির্দেশ এই এই ভাবনায় যারা বিশ্বাসী তাদের আঘাত করেছে বর্তমান সিপিএম নেতৃত্বের দিশাহীনতা । ক্ষমতা হারানোর দশ বছর পরেও তাদের আচরন যেন “Government in Waiting”। তাই ক্ষমতা ফিরে পেতে নৈতিকতা নয়, কৌশলই শেষ কথা। যাদের হাতে ক্ষমতা হারিয়েছি তাদের আটকানো সেকুলার ফ্রন্টের নামে আসন সংখ্যা ম্যানেজ করার অঙ্ক। আর এই চালচিত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বামপন্থীদের উজ্জ্বল ধারাবাহিক লড়াইটাই বাইরে রয়ে গেল। বামপন্থীদের ভোটের প্রচার, রণকৌশল দেখে মনেই হয়নি এবারের নির্বাচনে বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণের বিষ অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল।

বঙ্গ বিধানসভায় প্রতিনিধি শূন্য হলেও কোভিড পরিস্থিতিতে জনপরিসরে বামপন্থাকে আলোচনায় রেখেছে রেড ভলান্টিয়ার। চার এর দশকে এই রকমই সংকটে পড়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি। মহাত্মা গান্ধী ও অগস্ট আন্দোলনের বিরোধিতা করে একঘরে হয়েছিল পার্টি। অভিযুক্ত হয়েছিল দেশদ্রোহিতায়। তখন দলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক পি সি জোশী। ১৯৪৩ সালে তাঁর নেতৃত্বে দল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মন্বন্তরের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। জনসেবায় বড় ভুমিকা নিয়েছিল দল।

যাদের গায়ে দেশদ্রোহীর তকমা লেগেছিল তারাই ফুড কমিটি তৈরি করে ময়দানে নেমেছিল। কালোবাজারি ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে গড়েছিল তীব্র আন্দোলন। কমিউনিস্ট পার্টি গণবণ্টন ব্যবস্থার দাবি তুলেছিল। কমিউনিস্টদের এই প্রতিরোধী ভুমিকা জন চেতনা বাড়াতে অনুঘটকের কাজ করেছিল। জন চেতনার এই ছবি ধরা আছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “হারানের নাতজামাই” গল্পে। যেখানে পুলিশ, জোতদার গ্রামে বিপ্লবীকে ধরতে গিয়ে দেখেছিল মানুষের সমুদ্র। অতএব ইতিহাস আছে, রয়েছে বর্তমান। গণ আন্দোলনে প্রয়োজন রাজনৈতিক দিশা। তারজন্য প্রয়োজন সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কমরেডরা শুনছেন? সময় কিন্তু দ্রুত ধাবমান, একটু পা চালিয়ে কমরেড!