Date : 2024-03-19

Heritage Studio of Kumartuli : কুমোরটুলিতে এই প্রথম কোনও মৃৎশিল্পীর স্টুডিও পেতে চলেছে হেরিটেজ স্বীকৃতি

শাহিনা ইয়াসমিন, রিপোর্টার : কলকাতা শহরের বুকে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বা ভবন রয়েছে যা হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার সেই হেরিটেজ স্বীকৃতির তালিকায় নাম উঠতে চলেছে কাশী মিত্র ঘাটের জি পাল অ্যান্ড সন্স স্টুডিওর। কুমোরটুলিতে এই প্রথম কোনও মৃৎশিল্পীর স্টুডিও হেরিটেজ স্বীকৃতি পেতে চলেছে।

উত্তর কলকাতার অলিতে গলিতে ছড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। তেমনি এক ইতিহাস কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিটে। হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌছাঁয় হলুদ এক বাড়ির সামনে। এবং সেই বাড়ির উল্টোদিকে অবস্থিত জি পাল আন্ড সন্সের স্টুডিও। প্রায় 90 বছর পুরনো এই সৃষ্টিশালা এবার হেরিটেজ স্বীকৃতি পেতে চলেছে। লোহার বড় দরজা। সুন্দর করে সাজানো সদর দরজার সামনের অংশটি। দরজা দিয়ে ঢুকতেই সামনেই রামকৃষ্ণ দেব ও মা সারদা দেবীর মূর্তি যা দেখে মন ভরে যাবে।

উপর দিকে জলজল করে নাম লেখা জি পাল অ্যান্ড সন্স। ভিতরে প্রবেশ করলে অবাক করার মতো সব দৃশ্য। মুণি-ঋষি থেকে শুরু করে রাজা মহারাজা, মহাপুরুষ, সাহিত্যিক দের মূর্তি সারি সারি রাখা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ব্রহ্মানন্দ মহারাজ, আনন্দময়ী মা সকলের মূর্তি রয়েছে এখানে। কে এই জি পাল? কি বা তাঁর পরিচয় ? জি পালের পুরো নাম গোপেশ্বর পাল। মানুষকে একবার দেখা মাত্রই মাটি দিয়ে অবিকল প্রতিকৃতি তৈরি করে ফেলার অসামান্য ক্ষমতা ছিল এই মৃৎশিল্পীর। যে গুণের কথা বিশ্বাস করেননি সেই সময়ের ইংরেজরা।

1924 সালে লন্ডনে ব্রিটিশ এম্পায়ার এক্সিবিশনে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিকৃতি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন গোপেশ্বর পাল। তার জন্য মেডেল ও স্মারক দিয়ে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। গোপেশ্বর পাল তৈরি করেন তাঁর নিজস্ব একটি স্টুডিও। যা লন্ডনের স্টুডিওর আদলে তৈরি। তাঁর হাতে তৈরি প্রথম মূর্তি হল বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতীর প্রতিকৃতি। তার সঙ্গেই শোভা পাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি শেষ না হওয়া মূর্তি। শুধু মূর্তি গড়া নয়, দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরি করতেও ততটাই পারদর্শী ছিলেন তিনি। গোপেশ্বরবাবু ওরফে জি পালই প্রথম একচালা থেকে পাঁচচালায় প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। এই স্টুডিওতে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মূর্তি গড়ার কাজ করতেন তিনি। গোপেশ্বর পালের মৃত্যুর পর দায়িত্বভার পান তাঁরই ভাইপো মণী পাল। তারপর গোপেশ্বর বাবুর পুত্র সিদ্ধেশ্বর পাল। সিদ্ধেশ্বর বাবুর মৃত্যুর পর জি পাল অ্যান্ড সন্সের বর্তমান দায়িত্বে রয়েছেন সিদ্ধেশ্বর পালের শ্যালক ব্যোমকেশ পাল। তিনিও একজন শিল্পী।

রামকৃষ্ণ মিশনের অধিকাংশ কাজ হয় এই স্টুডিওতে। সারা দেশের প্রায় 95 শতাংশ রামকৃষ্ণ মিশনের যত মূর্তি এই স্টুডিওতেই তৈরি হয়। স্বামীজির শিকাগো ধর্মসম্মেলনে যোগদানের প্রতিকৃতিও শোভা পাচ্ছে এই স্টুডিওতে। ব্যোমকেশ পালের ইচ্ছা এই স্টুডিওর পাশেই গোপেশ্বর বাবুর নামে একটা মিউজিয়াম হোক। এতো বড় সম্মান পেতে চলেছেন শ্বশুর মহাশয়। তাই খুশি গোপেশ্বর বাবুর পুত্রবধূ যমুনা পাল।

81 বছর বয়সী শিল্পী ব্যোমকেশ পাল, জি পাল অ্যান্ড সন্সের দায়িত্ব ভার কাঁধে নিয়ে এখনও পর্যন্ত টানা কাজ করে চলেছেন। তার স্বপ্ন জি পাল ঍ন্ড সন্সকে মিউজিয়ামে পরিণত হতে দেখা। সেই ইচ্ছায় পূরণ হতে চলেছে রাজ্য সরকারের হেরিটেজ কমিশনের হাত ধরে। কুমোরটুলি অঞ্চলে এই প্রথম কোনও মৃৎশিল্পীর স্টুডিও হেরিটেজ তকমা পেতে চলেছে। তাতে খুশি ও গর্বিত গোপেশ্বরবাবুর পুরো পরিবার।