Date : 2024-04-18

তারাদের গল্প : জয়া শীল ঘোষই কি জয়ার আইডেন্টিটি ?

শ্রীতপা চক্রবর্তী ঠাকুর : তারাদের গল্পে আজ যার সাথে গল্প করলাম, তিনি একাধারে অভিনেত্রী,অন্যদিকে নৃত্যশিল্পী। আরও সুন্দর করে তাঁর পরিচয় দিতে গেলে বলতে হয় একজন ঘরণী,একজন মা।তিনি আর কেউ নন আমাদের অতি পরিচিত জয়া শীল ঘোষ।

তাঁর সাথে গল্প করে আজ জেনে নিলাম তাঁর পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তিগত জীবন,কর্মজীবন,স্মরণীয় মুহূর্ত,আফশোস,আগামীর পরিকল্পনা ও নিজস্ব ভাবনার কথা।মজা করে খেললাম র‍্যাপিড ফায়ার গেম।দেখে নিন কী জানালেন তিনি?

(পছন্দ-অপছন্দ)

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব সবেমাত্র পেরিয়ে এলাম আমরা।তাই পুজো দিয়েই শুরু করছি আজকের প্রশ্ন।

প্রশ্নঃ পূজোয় প্যান্ডেল-হপিং আপনার খুব পছন্দের বিষয়, কিন্তু গতবছর আর এবছর বিভিন্ন প্যান্ডেল ঘুরে দেখেছেন কি ?

জয়াঃ না। এই দু-বছর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা হয়নি করোনা পরিস্থিতির কারণে পুরো পুজোটাই খুব নিয়ন্ত্রিতভাবে কেটেছে। অন্যান্য বছর যেরকম ঘোরাঘুরি,খাওয়া-দাওয়া হয়, এই দু-বছর সবই কম-কম হয়েছে।কেবলমাত্র পাড়ার দুটি প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা হয়েছে।যদিও দীপাবলি গুয়াহাটিতে কাটবে এবছর……তাই এক্সাইটেড।

প্রশ্নঃ প্যারালাল সিনেমা আপনার পছন্দের বিষয়।আপনার পছন্দের অভিনেত্রীর তালিকার শীর্ষে শাবানা আজমি,স্মিতা পাতিল………সেই কারণেই কি খুব বেছে বেছে অভিনয় করেছেন,কম সংখ্যক ছবিতে ?

জয়াঃ অবশ্যই এটা একটা কারণ।রিয়েলিস্টিক ফিল্ম আমার খুব পছন্দের।এর পাশাপাশি ফ্যামিলি ফার্স্ট-এই কমসেপ্টে বিশ্বাসী হওয়ায় কাজ কম করেছি।তবে আমি সবসময়ই কোয়ালিটি ওয়ার্কে বিশ্বাসী।

প্রশ্নঃ অসমিয়া, পাঞ্জাবি, দক্ষিণভারতীয় পছন্দ সত্ত্বেও বাঙালিকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিলেন কেন ?

জয়াঃ মনে হয়- ভবিতব্য। এছাড়াও বাবা বাঙালি।বাংলার সংস্কৃতি সবসময় আমার পছন্দের।ছোট থেকেই দেখেছি বাঙালিরা বুদ্ধিদীপ্ত হয়।বাঙালিরা আজ যা ভাবে, অন্যেরা তা ভবিষ্যতে ভাবে।যদিও,বিক্রমকে আমার পছন্দ…..ফর হিস গ্রেট সউল।

(ব্যক্তিগত জীবন)

প্রশ্নঃ বাবা, মা, ভাই সকলেই ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত, সেই কারণেই কি অভিনয় বেছে নেওয়া, নাকি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে পড়াশুনা করার কারণে ?

জয়াঃ মূলতঃ বাবার কারণে অভিনয় জগতে আসা।অভিনেত্রী জয়া ভাদুড়ির নামেই আমার নামকরণ।একপ্রকার বাবার স্বপ্নপূরণ বলা যেতে পারে।তবে এনএসডিতে পাড়াশুনা করার সুবাদে অভিনয় শিক্ষা।দুলাল রয়, বাহারুল ইসলাম- এঁদের সহযোগিতায় অভিনয়কে পেশা বিসাবে বেছে নেওয়া।এনএসডির প্রশিক্ষণ, অভিনয় জগতে আমার চলার পথ অনেক মসৃণ করেছে।

প্রশ্নঃ 2003এ দেখা, 2004এ বিয়ে, 2005এ প্রথম সন্তান- একটু দ্রুত এগিয়েছেন কি ?

জয়াঃ খুব স্পনটেনিয়াস এই এগিয়ে যাওয়া।বিয়ের পর দুজনেই একসাথে খুব দ্রুত সন্তান চেয়েছিলাম। তাই দুজনের চাওয়াতেই এই পরিণতি।আমরা তো আমাদের প্রথম সন্তানকে  “লাভ চাইল্ড (Love Child) ” বলি।

(কর্মজীবন)

প্রশ্নঃ ফ্যামিলি ফার্স্ট-এই কনসেপ্ট আপনার কেরিয়ারে কতটা ক্ষতি করেছে?

জয়াঃ ক্ষতি করেছে ঠিক বলব না, তবে প্রভাব ফেলেছে নিশ্চয়ই।আমি মনে করি, আমার জীবনে যতটুকু পাওনা, আমি ঠিক ততটুকুই পাব।তবে ধীরে ধীরে 2019 থেকে কাজে ফিরছি যদিও করোনার কারণে খানিকটা বাধা পাচ্ছি।তবে একটু একটু করে কাজ এগোচ্ছে।শর্ট ফিল্মে প্রযোজনা ও অভিনয় করছি।

প্রশ্নঃ রিস্তে, কাহানি ঘর ঘর কি-র মতো সিরিয়ালে অভিনয়ের পর আর সিরিয়ালে অভিনয় করলেন না কেন ? স্যাটিসফ্যাকশনের অভাবে ?

জয়াঃ ঠিক সেই কারণে নয়। মুম্বইয়ে থাকতে হত। সেটা পসিবল ছিল না।বাচ্চা ছোট ছিল।তাই মুম্বইয়ে গিয়ে, থেকে, কাজ করা হয়নি। আর বাংলা সিরিয়ালে কখনও কাজ করতে চাইনি।

(স্মরণীয় মুহূর্ত)

প্রশ্নঃ বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত যখন বললেন, আপনিই তাঁর “উত্তরা”- কেমন লেগেছিল?

জয়াঃ বেস্ট ব্লেসিং অফ মাই লাইফ। গ্রেট ডিরেক্টর। ওনার সাথে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। দেখেছি মানুষ কীভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা করে।”উত্তরা”র জার্নি অবশ্যই আমার জীবনের মেমোরেবল জার্নি ।

প্রশ্নঃ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর অংশ হওয়া- অভিনেত্রী হিসাবে কতটা গর্বের ?

জয়াঃ সব শিল্পীই গর্ববোধ করে। নিজের দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারা অবশ্যই সম্মানের। আমি যখনই এই সমস্ত ফেস্টিভ্যালের পার্ট হয়েছি, আমার সাজ-পোষাকে আমাদের সংস্কৃতির প্রতিফলন যেমন শাড়ি,মেখলা-এই সমস্ত কিছুই সকলের নজর কেড়েছে। খুবই ভাল লাগার অভিজ্ঞতা।

(আফশোস)

প্রশ্নঃ ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি হাতছাড়া হওয়া- কতটা আফশোস হয় ?

জয়াঃ খুবই আফশোস হয়। “তাতিন” তখন 6 মাসের।ওকে ছেড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘায় গিয়ে থেকে শ্যুটিং করা পসিবল ছিল না।তবে, “খেলা” ছবিতে কাজ করতে না পারা আমার একটা আক্ষেপ। যদিও পরবর্তীতে “বন্দেমাতরম্” নামে একটি স্টেজ শো-তে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে স্টেজ শেয়ার করেছিলাম।আজও মনে আছে সেই অভিজ্ঞতা।

প্রশ্নঃ উত্তরার জন্য বেস্ট আক্ট্রেসের নমিনেশন পাওয়ার পরও যখন কিরণ খের পুরস্কার পেলেন, কি রকম অনুভূতি হয়েছিল ?

জয়াঃ খুব আফশোস হয়েছিল। পুরস্কারটি পেলে অবশ্যই আমার অভিনয় জীবনটা অন্য একটি গতি পেত। জাতীয় পুরস্কার পেলে সকলেই অন্যরকম চোখে দেখে।

(আগামীর পরিকল্পনা)

প্রশ্নঃ মনের মত প্রোডিউসর না পাওয়ার কারণেই কি “মেল্টিং পট”?

জয়াঃ ঠিক সেরকম নয়। মনের মত প্রোডিউসর পাই। কাজও করছি। মেল্টিং পট হল বিক্রমের আইডিয়া।

প্রশ্নঃ বিহুতে সম্রাজ্ঞী শিরোপা জিতেছেন আপনি। বিহু নিয়ে নতুন কোনও কাজের ভাবনা আছে ?

জয়াঃ না। নতুন কোনও ভাবনা নেই। আসলে এইসমস্ত ফোকফর্মগুলো বেঁচে থাকুক মৌলিকতা নিয়েই।এটাই আমার আশা। মানুষ বেশি বেশি করে এগুলো নিয়ে চর্চা করুক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই লোকধারা পরম্পরার সূত্রেই বাঁচিয়ে রাখুক। এই ধারাগুলি নিয়ে বেশি কিছু ভাবনা-চিন্তা করতে গেলেই মৌলিকতা নষ্ট হয়।

প্রশ্নঃ সক্রিয় রাজনীতিতে যাওয়ার কোনও ভাবনা ?

জয়াঃ এইমুহূর্তে একদম নয়। পাবলিক ফিগার হিসাবে শান্তি চাই, ধর্মনিরপেক্ষতা চাই। নিজস্ব মতামত আছে। দায়িত্ব নিয়ে সেই মতামত দিতে চাই। তবু বলব, আমার আরও অনেক কাজ রয়েছে করার মত-সেটা রাজনীতি নয়।

(নিজস্ব ভাবনা)

প্রশ্নঃ সেলিব্রেটি স্ট্যাটাস ধরে রাখতে সবসময় প্রচারে থাকা কি জরুরী, সেটা যেভাবেই হোক ভাল বা মন্দ ?

জয়াঃ আমি বিশ্বাস করি না। কাজে বিশ্বাস করি।কাজই শেষকথা বলে। কিছু কিছু ফরম্যালিটি করতে হয়,কখনও কখনও সম্পর্ক রক্ষা করতে হয় কিন্তু একটা কাজই আর একটা কাজ এনে দেয়। অন্য কিছুই নয়।

প্রশ্নঃ শিল্পীদের কোনও ভবিষ্যত নেই-তাই কি রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে সকলে ?

জয়াঃ বলতে পারব না। আমার তো মনে হয় শিল্পী ছাড়া সমাজের অস্তিত্ব বিপন্ন। শিল্প ছাড়া মানুষ শান্তি পাবেনা। তাই শিল্পীদের ভবিষ্যত নেই-একথা আমি মানি না।

(র‍্যাপিড-ফায়ার)

প্রশ্নঃ রিলেশনশিপে আরগিউমেন্ট জরুরী ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ শিল্পী হিসাবে কি চাইবেন যে, আগামী প্রজন্মও শিল্পকেই পেশা করুক ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ নিজের মায়ের চেয়েও কি নিজেকে “মা” হিসাবে বেশি নম্বর দেবেন ?

জয়াঃ না

প্রশ্নঃ কোরিওগ্রাফার হিসাবে প্রভুদেবা কি অভিনেতার থেকে বেশি ভাল ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ এতগুলো ভাষায় কাজ করা সত্ত্বেও অসমিয়া ছবিই কি বেশি আকর্ষণ করে ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ “এক্সকিউজ মি” ছবিটি করা কি ভুল ছিল ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ এনএসডি তে 1994-97,এই তিন বছরই জীবনে অভিনয় শিক্ষার শ্রেষ্ঠসময় মনে করেন ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ অ্যাডফিল্মস্,টেলি সিরিয়াল, মেনস্ট্রিম ও প্যারালাল মুভি,ভরতনাট্টম,বিহু,ক্রিয়েটিভ ডান্স এমনকি প্রযোজনাও-এককথায় কি জয়া শীল ঘোষ ভার্সেটাইল ?

জয়াঃ হ্যাঁ

প্রশ্নঃ জয়া শীল ঘোষই কি জয়ার আইডেন্টিটি ?

জয়াঃ হ্যাঁ (তবে আরও কিছু বলার ছিল)

প্রশ্নঃ “হঠাৎ নীরার জন্য”ই কি জীবনের মোড় ঘোরালো ?

জয়াঃ হ্যাঁ