Date : 2024-03-29

পালকি চলে, দুলকি চালে পাহাড় থেকে হাসপাতালে

সঞ্জু সুর, রিপোর্টার : বাইক অ্যাম্বুলেন্স, টোটো অ্যাম্বুলেন্স আমরা দেখেছি। এবার “পালকি অ্যাম্বুলেন্স“। পশ্চিমবঙ্গের সম্ভবত সবচেয়ে দূর্গম এলাকায় পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার সূচনা হল বুধবার। আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ফোর্ট এলাকায় এই পরিষেবার সূচনা করলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা।

আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বক্সা ফোর্ট। দূর্গম পাহাড়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। গ্রামগুলোতে হাজার আড়াই তিন মানুষের বাস। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই মানুষগুলো ন্যুনতম সরকারি পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে‌ই এসেছে। ভোটের সময় ভোট বাবুরা কষ্ট করে এখানে আসেন, বুথ তৈরি করেন, এই প্রান্তিক মানুষগুলোর ভোট ইভিএম বন্দি করে ফিরে যান শহরে। আসলে একে তো প্রত্যন্ত ও দূর্গম এলাকা, তায় যোগাযোগের জন্য নেই কোনো রাস্তা। যাতায়াত বলতে পাহাড় ডিঙোনো ছাড়া উপায় নেই। ফলে কেউ অসুস্থ হলে বা গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বাঁশের মাচায় কাপড় বেঁধে কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া। পাহাড়ি রাস্তায় এইভাবে অসুস্থ মানুষকে নিয়ে যাওয়ার সময় এর আগে বেশকিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তা নিয়ে এখানকার মানুষের অভিযোগ ও ক্ষোভের শেষ নেই।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। অনন্ত এতদিন এদের কথা তেমন কেউ কানে নেননি। তবে অতি সম্প্রতি এই মানুষগুলোর জন্য কালচিনি ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে একটি কমিউনিটি হেলথ ইউনিট চালু করা হয়েছে। যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় হাজার তিনেক গ্রামবাসী। এবার এই মানুষগুলোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা শুরু করলো আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন। রাস্তা নেই, তাই চারচাকার অ্যাম্বুলেন্সের প্রশ্ন‌ই ওঠে না। কিন্তু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই সমস্যার সমাধান করেছে অভিনব উপায়ে। একটা সময় গ্রাম বাংলায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম বলতে যে পালকি ব্যবহার করা হতো, এবার সেই পালকিকেই অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে কাজে লাগানো হচ্ছে। আপাতত একটা ‘পালকি অ্যাম্বুলেন্স’ পরিষেবা দেওয়ার কাজ করবে। বুধবার এই পরিষেবার উদ্বোধন করে জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকা হলেও আমরা মাঝেমাঝেই এখানে এসে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছি। এর আগে যেভাবে এখানকার মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো, তা সত্যিই অমানবিক ছিলো। এখন এই পালকি অ্যাম্বুলেন্স এখানকার মানুষকে অন্তত কিছুটা ভালো পরিষেবা দেবে।” কিছুদিন আগে হেলথ ইউনিট, এখন অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে এখানকার স্থানীয় ডুকপা প্রজাতির মানুষজন বেশ খুশি। তাদের বক্তব্য, গতবছর লকডাউনের সময়েও বাবু(জেলাশাসক) এসেছিলেন। খাবার দিয়েছেন, টিকা দিয়েছেন। আর এটা (পালকি অ্যাম্বুলেন্স) আমাদের খুব কাজে লাগবে। প্রসঙ্গত প্রথাগত অ্যাম্বুলেন্স বলতে যা বোঝায়, তা হয়তো এতে থাকছে না। কিন্তু স্যালাইন, অক্সিজেন থাকবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কেউ অসুস্থ হলে তাকে এই পালকি অ্যাম্বুলেন্স করে পাহাড় থেকে নিচে নামিয়ে আনা হবে। সেখান থেকে গাড়িতে করেই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর যৌথভাবে এই কাজের তদারকি করবে।