Date : 2024-05-04

প্রেসিডেন্সি জেল থেকে নিখোঁজ মামলায় সিসিটিভির ফুটেজ হায়দ্রাবাদে পাঠানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, রিপোর্টার: মামলার বয়ান অনুযায়ী বেআইনিভাবে মদ বিক্রি করার অভিযোগে বাগনান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল রঞ্জিত ভৌমিক নামে এক ব্যক্তি কে। গত ৬ ডিসেম্বর ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলেও ২১ শে ডিসেম্বর রঞ্জিত ভৌমিক জামিন পান। জামিন পাওয়ার পর তার ছেলে বুদ্ধদেব ভৌমিক ২২শে ডিসেম্বর প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে বাবার কে আনতে যান। বুদ্ধদেব বাবুকে চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়বলে অভিযোগ। আগের দিন রাত্রে অর্থাৎ ২১ শে ডিসেম্বর রাত ৮টায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন। রঞ্জিত বাবুর নানা জটিল রোগে আক্রান্ত তাঁর পরেও কেন রাতের অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া হলেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে রঞ্জিত ভৌমিক এর পুত্র বুদ্ধদেব ভৌমিক এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এফআইআর করতে গেলে পুলিশ প্রথমে এবার নিতে রাজি হয়নি পরবর্তীকালে আলিপুর থানা এফআইআর নেয়।
বুদ্ধদেব ভৌমিক বাবা নিখোঁজ হওয়া রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।
শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সরকারপক্ষের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান সিসিটিভি কাজ করছে কাজ করছে। কিন্তু রেকর্ড হচ্ছে না।কারণ ডিভিয়ার কাজ করছে না। DVR নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে ।এর পর বিচারপতি জেলের রেজিস্ট্রার চেয়ে সেটিকে খতিয়ে দেখেন।

আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও জেলের রেজিস্টার দেখে খুশি হননি বিচারপতি।ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন এই পুলিশ অফিসার কে সাসপেন্ড করা উচিৎ। বিচারপতি সরকারি আইনজীবী র উদ্দেশ্য বলেন রেজিস্টার দেখা যাচ্ছে রঞ্জিত বাবুর রিলিজ নিয়ে কোনও নথি ভুক্তি নেই,তিনি আর বলেন রাত ৭.৫২ ছাড়েন কি করে? সিসিটিভি র ফুটেজ নেই। রেজিষ্টার সঠিক নয়। আদালতকে কি বোঝাতে চাইছেন?একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারি আইনজীবীকে।
মামলাকারির পক্ষের আইনজীবী সৃজিব চক্রবর্তী বলেন জেলে বন্ধিদের ছাড়ার রুল দেখাবার আবেদন জানান।

সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশ্যI বিচারপতি বলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ জেল এর ওপরে কে আছেন?আদালত মনে করছে রহস্যের উদঘাটন করার জন্য বড় কোনও অফিসার কে দিয়ে বিষয়টা পর্যালোচনার দরকার। কে করবে? সরকার পক্ষের আইনজীবী অমিতেশবন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজিব কুমারের নাম প্রস্তাব করেন।কিন্ত মামলাকরির পক্ষের আইনজীবী তীব্র বিরোধিতা করেন। বিচারপতি বলেন সমস্ত মামলাটা রাজ্যের এডভোকেট জেনারেলকে দেখতে বলছি।তিনিই পুলিশের হয়ে দেখবেন,পাশাপাশি DVR টি CFSL হায়দ্রাবাদ পাঠানো হোক। সরকারি আইনজীবী বলেন আলিপুর পুলিশ একটা রিপোর্ট দিছি।রেজিস্টার থেকে গাফিলতি অস্বীকার করা যায় না।
তার পুত্র ও নাতির সাথে দেখা গেছে সমস্ত রেজিস্টার, DVR সমস্ত রিপোর্ট এডভোকেট জেনারেলের অফিসে জমা থাকবে।মামলাকারি আইনজীবী ২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হোক।অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এবং এডভোকেট জেনারেল দ্বারা একটি কমিটি গঠন করা হোক? উত্তরে সরকারি আইনজীবী বলেন যেকোনো উচপদস্ত আইপিএস কে দেওয়া হোক
বিচারপতি বলেন এজি ওপরই ভরসা রাখছি। তিনি DG কে নির্দেশ দেবেন। জেলের সাথে জড়িত নয় এমন একজন DGP পদাধিকারী একজন কে দিয়ে তদন্ত করে আদালতে সিল কভারে রিপোর্ট জমা করবেন।আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি মধ্যে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ ডিসেম্বর বেআইনি ভাবে দেশি মদ বিক্রির অভিযোগে বাগনানের বাসিন্দা ৫০ বছরের রঞ্জিত ভৌমিককে মারধর করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় উলুবেড়িয়ার মহকুমা আদালত। রঞ্জিতের পরিবারের তরফে জানা যায়, কিডনির সমস্যা থাকায় গত ১২ ডিসেম্বর তাঁকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। ২১ ডিসেম্বর উলুবেড়িয়া কোর্টে জামিন পান রঞ্জিত। সেই মতো পর দিন বাবাকে আনতে প্রেসিডেন্সি জেলে যান তাঁর ছেলে বুদ্ধদেব ভৌমিক। তাঁর অভিযোগ, এক ঘণ্টা বসতে বলে প্রায় চার ঘণ্টা তাঁকে বসিয়ে রাখেন জেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে তাঁরা জানান, আগে দিন রাত ৮টায় রঞ্জিতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও রঞ্জিত বাড়ি ফেরেননি।