Date : 2024-04-24

Calcutta Town Hall : নয়া সাজে কলকাতা টাউন হল। সংস্কারের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, রিপোর্টার : নতুন আঙ্গিকে সেজে উঠেছে মহানগরীর টাউন হল।সোমবার সকালে কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পৌরসভার চেয়াম্যান মালা রায়, মেয়র পরিষদ দেবাশীষ কুমার টাউন হল পরিদর্শন করেন।দীর্ঘ সময় ধরে মেরামতির কাজ চলছিল।ঐতিহাসিক টাউন হলের সংস্কার কাজের দায়িত্বে ছিলেন আই আই টি খড়গপুর।ইতিহাস বিজড়িত টাউন হলের হস্তান্তর হয় কলকাতা পুরসভার।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার সি.ভি রমন, স্যার প্রফুল্ললচন্দ্র রায়, ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, স্যার নীলরতন সরকার, রামানন্দ চ্যাটার্জী প্রমুখের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব টাউন হলে মিলিত হতেন এবং সেখানকার সভা-সমাবেশের শোভাবর্ধন করতেন। কলকাতা টাউন হল যে কোনো দর্শনার্থীর চোখে পড়ার মতো একটি দর্শনীয় ভবন। স্থাপত্যে ডরিক রীতির নমুনা বলা যেতে পারে। উনিশ শতকে এটি ছিল কলকাতার বৃহত্তম ভবন। এখানে সবরকমের সভাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। যে-কোনো মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষের জন্যই এটি ছিল উন্মুক্ত।
১৭৯১ সালে Le gallais Tavern-এ অনুষ্ঠিত একটি সভায় ভবনটির সূচনা হয়। সভার আহবায়কবৃন্দ স্থির করেন, ইংরেজ বসতির বিনোদনের জন্য একটি সরকারি ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে চাঁদা তোলা হবে। পরবর্তীকালে ১৮০৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আরেকটি সভায় নাগরিকবৃন্দ একটি টাউন হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সভা অনুষ্ঠান ও অভ্যর্থনা প্রদান, এবং গণ্যমান্য ইংরেজদের দুর্লভ সামগ্রী প্রদর্শন করা ছিল এ টাউন হল নির্মাণের উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ না-করলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এতদুদ্দেশ্যে অর্থব্যয়ে রাজি ছিলনা। এ-কারণে পাবলিক লটারির মাধ্যমে অর্থ সংগৃহীত হয়।

১৮০৭ সালে ভবনের নকশা অনুমোদিত হয় এবং কর্ণেল জে, গার্স্টিনকে নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৮১৩ সালে। অতঃপর টাউন হল কমিটি নামক একটি পর্ষদের কাছে এটি হস্তান্তরিত হয়। অবশেষে ১৮৬৭ সালে টাউন হলটি পৌরসভার (পরবর্তীকালে কর্পোরেশন) সম্পত্তিতে পরিণত হয়।

ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক প্রয়োজন মেটানোর মতো যথেষ্ট পরিসর টাউন হলটিতে ছিল। দ্বিতল বিশিষ্ট এ ভবনটি ইটের ভিতের উপর দাঁড়ানো। একতলার উচ্চতা ২৩ ফুট। এখানে মার্বেল-নির্মিত একটি হলঘর এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য কিছু অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার ঘর রয়েছে। দ্বিতীয় তলার উচ্চতা ৩০ ফুট। এর মেঝে সেগুনকাঠের তক্তায় মোড়ানো। এখানে দুসারি স্তম্ভ পরিবেষ্টিত একটি কেন্দ্রীয় হলঘর রয়েছে। উত্তর প্রান্তে একটি সঙ্গীত গ্যালারি এবং পূর্বপ্রান্তে রয়েছে একটি উঁচু প্ল্যাটফর্ম। এর সঙ্গে কিছু ক্ষুদ্র কক্ষ, যা একসময় তাস খেলা এবং নৈশভোজের জন্য ব্যবহূত হতো। রাস্তা থেকে এক সারি সিঁড়ি এ চতুষ্কোণ ভবনের সম্মুখভাগের সিংহদ্বারে উঠে গেছে। উত্তরদিকে উঁচু আচ্ছাদনের গাড়ি বারান্দা।

শুরুতে এ টাউন হল কলকাতাবাসী ইউরোপীয়দের মধ্যে পরস্পর সাক্ষাত এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করার একটি স্থায়ী জায়গা করে দেয়। বল নাচ এবং নৈশভোজের আয়োজন ছাড়াও এখানে সভা করে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো। এ টাউন হলেই একাধিক সভায় ইউরোপীয়রা তাদের অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরেন।