Date : 2024-04-23

গণ্ডারের বাড়বাড়ন্ত। উচ্ছসিত বন দফতর।

সঞ্জু সুর, রিপোর্টার : রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেল গণ্ডারের সংখ্যা। সদ্য হ‌ওয়া গণ্ডার সুমারির ফল বেরিয়েছে মঙ্গলবার। তাতে দেখা যাচ্ছে আমাদের রাজ্যে গন্ডারের মূল বাসস্থান জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে গণ্ডারের সংখ্যা প্রায় তিনশো ছুঁই ছুঁই। ২০১৯ সালের ২৩৭ থেকে বেড়ে জলদাপাড়ায় গণ্ডারের সংখ্যা হয়েছে ২৯২ টি। স্বাভাবিকভাবে উচ্ছসিত রাজ্য বন দফতর।

১৯৮৫ সালে জলদাপাড়ায় গণ্ডারের সংখ্যা কমতে কমতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১৫টিতে। অশনি সংকেত দেখেছিলো রাজ্য তথা কেন্দ্রের আধিকারিকরা। মূলতঃ চোরাশিকারের কারণেই যে গণ্ডারের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন বন দফতরের আধিকারিকরা। চোরাশিকার আটকাতে ও গণ্ডার সংরক্ষণে জোড় দেওয়া হয় সচেতনতা বৃদ্ধির উপর। প্রথম দিকে সাফল্য না এলেও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে গণ্ডারের সংখ্যা।

কোভিডের কারণে তিন বছর বন্ধ(২০১৯ সালে শেষ সুমারি হয়েছিলো। ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিডের কারণে সুমারি করা যায় নি) থাকার পর চলতি মাসের ২৫ ও ২৬ মার্চ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে গণ্ডার সুমারি চালায় বন দফতর। সেই সুমারি অনুয়ায়ী এই জঙ্গলে মোট ২৯২ টি গণ্ডারের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। ২০১৯ এ যে সংখ্যা ছিলো ২৩৭ টি। প্রসঙ্গত গণ্ডার সুমারির ক্ষেত্রে পাগ মার্ক বা পায়ের ছাপ দেখে সুমারি করার রেওয়াজ নেই। এক্ষেত্রে একেবারে সশরীরে গণ্ডার দেখে তাকে চিহ্নিতকরণ করে নাম্বারিং করা হয়। ফলে সুমারির জন্য অনেক বেশি লোকবল প্রয়োজন হয়। দুই দিনের সুমারিতে তিনশোর বেশি বনদফতরের কর্মি, আধিকারিক সহ বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও অংশ নিয়েছিলো।

সুমারির যে ফল সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে ২১৬ বর্গ কিঃমিঃ-র বেশি এই জাতীয় উদ্যানে পুরুষ গণ্ডারের থেকে স্ত্রী গণ্ডারের সংখ্যা বেশি। জলদাপাড়ায় এই মুহূর্তে ১৩৪ টি স্ত্রী ও ১০১ টি পুরুষ গণ্ডার রয়েছে। ৫৭ টি গণ্ডারের লিঙ্গ নির্ধারন করা সম্ভব হয় নি। স্ত্রী গণ্ডারের সংখ্যা বেশি হ‌ওয়ায় আরো বেশি খুশি বনদফতর। বনদফতরের এক আধিকারিকের মতে, এতে সঙ্গম সিজিনে (বর্ষাকালে) পুরুষ গণ্ডারদের মধ্যে মারামারি কমবে, ফলে নিজেদের মধ্যে আহত হ‌ওয়া বা নিহত হ‌ওয়ার সম্ভাবনা কমবে। পাশাপাশি পরবর্তী বছরগুলোতে গণ্ডারের সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। যা জলদাপাড়ার জীববৈচিত্রের জন্য অনেকবেশি সুখকর। তবে গণ্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে তখন কিন্তু জীববৈচিত্র ধাক্কা খাবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। তাঁদের মতে, গণ্ডারের বাসস্থানের(জঙ্গলের কোর এরিয়া) পরিধি বৃদ্ধি না হয়ে যদি শুধু সংখ্যা বৃদ্ধি হয় তখন পরিমিত ও পর্যাপ্ত খাদ্যের জন্য নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়বে গণ্ডারগুলো। যা কোনোমতেই কাম্য নয়। তবে শুধু জলদাপাড়াই নয়, গরুমারা ও কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানেও গণ্ডারের সংখ্যা যথেষ্ট বেড়েছে।