সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া নিয়ে টুইট যুদ্ধে জড়ালেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ও তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। একদিকে অমিত মালব্যর দাবি মিথ্যাচার করছে রাজ্য, অন্যদিকে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের দাবি রাজ্যের চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রী মানবেন কি না সেটা আগে জানান।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া রয়েছে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের ন্যায্য পাওনা টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না। উল্টে প্রধানমন্ত্রী বলছেন পেট্রো পণ্যের ভ্যাট কমাক রাজ্য। পরপর দুই দিনই মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সন্মেলনে বলেন, “আগে কেন্দ্র রাজ্যের বকেয়া ৯৭ হাজার কোটি টাকা দিক। তাহলে আমরা পরের দিনই কেন্দ্রকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেবো।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বকেয়া টাকার দাবি নিয়ে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য টুইট করে বলেন রাজ্যের দাবি মতো অত টাকা বকেয়া নেই, মিথ্যাচার করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৫ মার্চ ২০২২ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে তথ্য সংসদে পেশ করেছিলেন সেই তথ্য তুলে ধরে দাবি করেন ২০২১/২২ অর্থ বর্ষে জিএসটি বাবদ কেন্দ্রের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়ার পরিমাণ মাত্র ৪,২৯২ কোটি টাকা। অমিত মালব্যর আরো দাবি ২১/২২ অর্থ বর্ষে জিএসটি কমপেনশেসন বাবদ কেন্দ্র সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ইতিমধ্যেই ৪,৫৩১ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে।
অমিত মালব্যের এই টুইটের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি অমিত মালব্যকে ট্যাগ করে লিখেছেন, “আপনি চিন্তা করবেন না। আমাদের দাবির সমর্থনে সমস্ত তথ্যই আপনাকে দেওয়া হবে।” কিছুটা কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ লেখেন, “আপনি বরং দেখুন পশ্চিমবঙ্গের সরকার যে চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রী কে জানিয়েছে, সেই বিষয়ে উনি কি ভাবছেন। উনি কি রাজ্যের সব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করছেন ?”
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সপক্ষে নবান্ন সূত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে বকেয়া টাকার পরিমানের একটা হিসাব পাওয়া গিয়েছে। কোন প্রকল্পে কত টাকা বাকি রয়েছে তা এইরকম-
১) আমফান ঘূর্ণিঝড়ের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তার জন্য কেন্দ্রের কাছে বকেয়া-৩২,৩১০ কোটি টাকা।
২) বুলবুল ঝড়ে ক্ষতিপূরণের পরিমান-৬,৩৩৪ কোটি টাকা।
৩) যশ ঝড়ে ক্ষতিপূরণের পরিমান-৪,২২২ কোটি টাকা।
৪) সমগ্র শিক্ষা মিশনে বকেয়া-১৫,৮৬৪ কোটি টাকা।
৫) কেন্দ্রীয় কর থেকে রাজ্যের পাওনা(২০২০/২১)-১৪,২২৫ কোটি।
৬) কেন্দ্রীয় কর থেকে রাজ্যের পাওনা(২০১৯/২০)-১১,০০০ কোটি টাকা।
৭) জিএসটি ক্ষতিপূরণ-৬,৩৭৫ কোটি।
৮) পশ্চাৎপদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল (বিআরজিএফ)-২,৩৩০ কোটি।
৯) ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা খাদ্য ভর্তুকিতে বকেয়া-১,২৬৩.৯৭ কোটি।
পাশাপাশি স্বচ্ছ ভারত মিশনে বকেয়া ৯৮৪.৫৩ কোটি, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে বকেয়া ৭৪২ কোটি, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে বকেয়া ৪৮৩ কোটি। এছাড়াও আরো বেশকিছু প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের বকেয়া টাকার পরিমান আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা বলে দাবি রাজ্য সরকারের। রাজ্যের অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, অমিত মালব্য যে তথ্য দিয়েছেন সেটা শুধুমাত্র জিএসটি কমপেনশেসন বাবদ কেন্দ্রের কাছে বকেয়া সংক্রান্ত। কিন্তু রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন প্রকল্প চালাতে হয় যার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে অর্থের সংস্থান করে। সেইসব প্রকল্পের অনেক ক্ষেত্রে রাজ্য অর্থ দিয়ে প্রকল্প চালিয়ে গেলেও কেন্দ্রের থেকে টাকা বকেয়া রয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেইসব মিলিয়েই বলেছেন।