সঞ্জু সুর, সাংবাদিক ঃ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র তিরস্কারের মুখে পূর্ত দফতর। শুধু কাজ ফেলে রাখা নয়, বেশি টাকা ব্যয় বরাদ্দের দাবি নিয়েও যে মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন তিনি।
বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বিদ্যাসাগরের স্মরণে একটা বর্ণপরিচয় গেট ও বিদ্যাসাগরের জন্মভিটায় বীরসিংহ গেট করা হবে। তারপর পার হয়ে গেছে প্রায় বছর তিনেক। কিন্তু সেই দুটি গেট তৈরির কাজ এখনো শুরুই হয় নি। ডিপিআর (ডিটেইলস প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি হয়ে গেলেও এখনো অর্থ দফতর থেকে ছাড়পত্র পাওয়া যায় নি বলে কাজ শুরু হয় নি। তিনি নিজে যে গেট তৈরির কথা বলেছিলেন, সেই গেটের কাজই না শুরু হওয়ায় বিস্মিত মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকেই জানতে চান ওই গেট তৈরির জন্য কত টাকা চাওয়া হয়েছে। জেলাশাসক রস্মি কমল জানান ওই দুটি গেট সহ একটি কমিউনিটি হল মিলিয়ে মোট ৩২ কোটি টাকা প্রয়োজন। টাকার অঙ্ক শুনেই আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “পিডব্লুইডি-র এত বেশি খাই কেন ? ডিপিআর সাবমিট হয়ে যাওয়ার পরেও তা আটকে রেখেছে, তারমানে আবার টাকা বাড়াতে চাইছে। বাপরে খাই কতো !” দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তারপরেও বলতে থাকেন, “আমি যেন কাজ করাই নাহ্! এই তো কালীঘাটের গেট করালাম। পঞ্চাশ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কলকাতায় যদি এই টাকায় হয়ে যায় তাহলে এখানে এত টাকা লাগবে কেন ?” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন দুটো গেট আর একটা কমিউনিটি হল তৈরি করতে দুই কোটি করে মোট ছয় কোটির মধ্যে করতে হবে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীনে এই গেট তৈরি করার দ্বায়িত্বে ছিলো পূর্ত দফতর। মুখ্যমন্ত্রী তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রধান সচিব শান্তনু বসুকে বলেন পূর্ত দফতরের থেকে কাজ কাটো। হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা এইচআরবিসি(হুগলী রিভার ব্রিজ কমিশনারেট) এর ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে লাগাও। দফতরের প্রধান সচিব বলেন, খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী একটা তালিকা হাতে নিয়ে বলতে শুরু করেন এই জেলায় তিনি প্রায় ১১৫০ টি প্রকল্পের কাজের সূচনা করেছিলেন। তারমধ্যে ১১০৯ টা কাজ শেষ করা হয়েছে। ২৬ টা কাজ চলছে। কিন্তু ১৫ টা কাজ শুরুই হয় নি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সিএমও থেকে সার্ভে করাচ্ছি। তোমরা আমাকে দিয়ে শিলান্যাস করাবে, আর তারপর সেই কাজটা হবে না। এটা হবে না।
রাজ্যে লক্ষীর ভান্ডার সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প চালু রাখতে গিয়ে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করতে হচ্ছে, সেই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর নিজের হাতে শিলান্যাস করা প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ না করার ফলে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এতটা ক্ষুব্ধ বলে মনে করছেন সরকারের শীর্ষ মহলের আধিকারিকরা।