Date : 2024-04-19

মহামান্য রাজ্যপাল ও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক সৌজন্যের না সংঘাতের?

রুমঝুম সামন্ত, নিউজ ডেস্ক:-রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক সম্পর্কের টানাপড়েন সুবিদিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মতবিরোধ ও সংঘাত লেগেই রয়েছে। টুইটে মন্তব্য করে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেও ছাড়েন না রাজ্যপাল। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে রাজ্যপালকে ব্লক করার কথা জানান। তাঁদের সম্পর্কে সংঘাত থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্কটা হয়তো অনেকটাই সৌজন্যের।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হলেও প্রকৃত শাসন ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত থাকে। নিয়মানুসারে, বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যপাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান। রাজ্যপালই মুখ্যমন্ত্রীকে সপথ বাক্য পাঠ করান। ভারতে রাজ্যপালদের নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তেমনই রাজ্যপাল বনাম মুখ্যমন্ত্রীর লড়াই পশ্চিমবঙ্গে নতুন কথা নয়।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা দলকে বাদ দিয়ে বাকি সব দলের অভিযোগ, “রাজ্যপাল হলেন কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট। আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজ্যে এই পদে যাঁরা থাকেন তাঁদের একমাত্র কাজ হল, সেই দলের বা কেন্দ্রীয় সরকারের মর্জিমতো চলা”।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়েও বিতর্কের অন্ত নেই।
রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক
বিভিন্ন সময়ে আইনি খুঁটিনাটি তুলে ধরে রাজ্যকে বিব্রত করে থাকেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য পদে রাজ্যপাল নন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে অধিষ্ঠিত করার জন্য রাজ্য বিধানসভায় বিল আনা হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠক ডেকে একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সংবিধান নিয়ে কোনও ধারণা নেই। রাজ্যপালের কাছে দায়বদ্ধ তিনি। বাংলায় আইনের শাসন নেই। সংবিধান মেনে সরকারি কর্মীদের কাজ করা উচিত। বাংলায় গণতন্ত্র বিপদের মুখে। ভোট পরবর্তী হিংসা তারই প্রমাণ”।
বাজেট অধিবেশন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপারিশ ফেরত পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। পরে এ বিষয়ে টুইট করে জানান, “সংবিধানের নিয়ম মেনে সুপারিশ পাঠানো হয়নি। তাই তিনি ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন”।
২০২০, ১৮ অক্টোবর রাজ্যে পুলিশি হেফাজতে একটি মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তিনি টুইটে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “এটা তো আইন শৃঙ্খলাহীন নৈরাজ্য”।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিতশাহের সঙ্গে দেখা করার পরেও টুইটে বলেন, “রাজ্যে কার্যত নৈরাজ্য চলছে। সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে”। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে রাজ্যপালকে ব্লক করেছেন তিনি।
“মুখ্যমন্ত্রী বোনের মতো, গভীর সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে” এ কথাও শোনা গেছে জগদীপ ধনখড়ের মুখে। অন্যদিকে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালকে নিজের হাতে আঁকা ছবিও উপহার দেন মুখ্যমন্ত্রী। নানা প্রশাসনিক ঘাত প্রতিঘাত থাকলেও প্রশ্ন থেকেই যায় মহামান্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক সৌজন্যের না সংঘাতের?