Date : 2024-03-29

অবশেষে সাসপেনশন প্রত্যাহার। বিধানসভায় ঢুকতে পারবেন সাত বিজেপি বিধায়ক।

সুঞ্জু সুর, সাংবাদিক ঃ বিধানসভার নীতিবিরুদ্ধ কাজ করার জন্য মার্চ মাসে দুই দফায় সাত বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ডেড করা হয়েছিলো। প্রায় আড়াই মাস পর সেই সাসপেনশন প্রত্যাহার করা হলো। ফলে বিধানসভার অধিবেশনে অংশ নিতে আর কোনো বাঁধা র‌ইল না শুভেন্দু অধিকারী সহ সাত বিজেপি বিধায়কের।

৮ মার্চ রাজ্যপালের ভাষনের মধ্য দিয়ে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন রাজ্যপালের ভাষন পাঠে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় ও মিহির গোস্বামীর বিরুদ্ধে। এই নিয়ে শাসক বিরোধী বিধায়কেরা ঝামেলায় জড়ান। অধ্যক্ষের আসনের সামনে গিয়ে অবাঞ্ছিত ব্যবহার করার অভিযোগে বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় ও মিহির গোস্বামী কে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ডে করা হয়। পরবর্তীকালে ২৮ মার্চ আরো একটি ঘটনায় (অধিবেশন কক্ষে হাতাহাতি হয় শাসক বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে) বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, মনোজ টিগ্গা সহ মোট পাঁচ জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়। দুটি ক্ষেত্রেই শাসক দলের পক্ষ থেকে মোশন এনে পাশ করানোর পর অধ্যক্ষ এই সাসপেনশনের কথা জানান।

বিধানসভার ইতিহাসে নজিরবিহীন ভাবে বিরোধী দলনেতাকে এইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেনশনের ঘটনা ঘটে।সেই থেকে বিধানসভার কার্যপ্রণালীতে অংশ নিতে পারেন নি এই সাত বিধায়ক। সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বিধানসভার অলিন্দে অবস্থান বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বিজেপি বিধায়কদের। সেই সঙ্গে অন্যায়ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতা হাইকোর্ট বিষয়টির মিটমাটের জন্য অধ্যক্ষের কাছে পাঠান। অধ্যক্ষ‌ও জানিয়ে দেন বিজেপি বিধায়করা আবেদন করলে (মোশন আনলে) তিনি অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন। এরপর বিজেপি বিধায়করা বিধানসভায় মোশন আনেন, কিন্তু বিধানসভার পদ্ধতি মেনে সেই মোশন আনা হয় নি বলে অধ্যক্ষ সেটা খারিজ করে দেন। তিনি বিজেপি বিধায়কদের জানান আইন ও রীতি মেনে মোশন আনতে। সেই মোতাবেক বৃহস্পতিবার বিজেপি বিধায়ক অগ্নীমিত্রা পল ও শিখা চ্যাটার্জি দুটো মোশন আনেন। এদিন অধ্যক্ষের ঘরে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিষয়ে সহমত পোষণ করেন উপস্থিত সদস্যেরা। পরে বিধানসভার অধিবেশনের দ্বিতীয় অর্ধ শুরু হলে অধ্যক্ষ বিষয়টি উত্থাপন করেন। তখনই তিনি জানান, “বিধানসভা সবার জন্য। কাউকে বাইরে রেখে বিধানসভা চালাতে চাই না। তবে বিধানসভার বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ ভালো নয়। সদস্যদেরও বুঝতে হবে তাদের সীমাবদ্ধতা কতটা। এমনকিছু মন্তব্য করা বা এমন কিছু করা উচিৎ নয়, যা মানুষের কাছে অন্য বার্তা নিয়ে যায়।” পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরাও একদিন বিরোধী ছিলাম। তখন বর্তমান বিরোধী দলনেতা আমাদেরই সহায়ক বিধায়ক ছিলেন। সদনের নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা উচিত। এই বিষয় নিয়ে হাইকোর্টে যাওয়ার দরকার ছিল না। বিধানসভার অন্দরে দাড়িয়ে এভাবে মতপ্রকাশ করা যায় কিনা স্পিকার বুঝবেন। আশাকরি আপনাদের বোধোদয় হয়েছে।” এদিকে সাসপেনশন প্রত্যাহার নিয়ে বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক তথা সাসপেন্ডেড বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, “আমি মনে করি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ওরা সাসপেনশন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। আমি এটাও মনে করি যে আমরা যেভাবে এখানে বসে সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিষয়ে আন্দোলন করেছি, এটা সেই আন্দোলনের জয়।”