Date : 2024-04-20

শেখার কোনও বয়স হয় না। তা প্রমান করেছেন ৫২ বছর বয়সের প্রদীপ হালদার।

নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক:- বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হবে। আর অদম্য জেদ ও চেষ্টায় বাবার সেই স্বপ্ন পুরণের পথে নদীয়ার ৫২ বছরের প্রদীপ হালদার। ২২ বছর ধরে ডাক্তারী প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছেন তিনি।
অবশেষে সফলতা এসেছে তার ঝুলিতে। তিনি এখন ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া।

ছয় বার হারের পর বানুকবার্নের যুদ্ধে ইংরেজদের পরাজিত করতে সক্ষম হন রবাট ব্রুস।একটা মাকড়সা প্রবল বাতাসের মুখে একশত বার চেষ্টা করার পর জাল বুনতে সক্ষম হওয়ায় তার যুদ্ধ জয়ের অনুপ্রেরণা। তমনই নদীয়ার প্রদীপ হালদারের কাহিনিও অনেকটা রবাট ব্রুসের মত। ২২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ডাক্তারী পড়ার সুযোগ। নদীয়ার বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া প্রতাপ পুর গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ হালদার । তিনি পেশায় একজন দীনমজুর । ১৯৮৬ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর অর্থের অভাবে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তখন থেকে টিউশনি করে ও দিনমজুর খেটে সংসারের জোয়াল টানতে শুরু করেন প্রদীপ। তবে মরে যায়নি ডাক্তার হওয়ার বাসনা। স্বপ্নটাকে মনের মধ্যেই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।

১৯৮৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন প্রদীপবাবু।
তারপর সাংসারিক অভাবে পড়া ছেড়তে হয় তাতে। তবে মনের মধ্যে সুপ্ত ছিল ডাক্তার হওয়ার বাসনা। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি ফের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। কোন প্রাইভেট টিউশনি ছাড়াই নিজ চেষ্টায় ২০০০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তবে লক্ষ্য ডাক্তার হওয়া। তারজন্য বসতে হবে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে।
জয়েন্ট এন্ট্রান্সে বসার জন্য পুরনো  বই কেনা শুরু  করেন।২০০০ সালে প্রথম মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন,তবে সফল হননি।
টানা ২২ বছরের প্রচেষ্টায় তিনি সফলতা পান নিটে। আর তাই এখন প্রদীপ হালদার ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র।

সারাদিন দিনমজুর আর গৃহশিক্ষকের মতো হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যেই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়তে বসতেন। এরজন্য শুনতে হয়েছে লোকের নানা ধরনের টিপ্পনি। তবে হার মানেননি তিনি। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে মন দিয়েছেন পড়াশোনায়। যা তাতে সফল করেছে।

শেখার কোনও বয়স হয় না তা প্রমান করেছেন প্রদীপবাবু। যে বয়সে পৌঁছে মানুষের স্বপ্নপূরণের আকাঙ্খা প্রায় মরে যায়। যেখানে জীবনের একটা অসফলতা বর্তমান প্রজন্মের মন ভেঙে দিচ্ছে। সেখানে আগামী প্রজন্মের কাছে একটা উদাহরণ প্রদীপ হালদার মত ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের।

অল্প সময়ের মধ্যেই সহপাঠী সহ সিনিয়রদের খুব কাছের হয়ে উঠেছেন প্রদীপ হালদার। মেডিক্যাল কলেজের প্রত্যেকেই যে কোনও বিষয়ে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নাই বা হোক এমবিবিএস ডিগ্রি। তবুও হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হিসেবে স্বপ্নপূরণ হওয়ায় খুশি প্রদীপবাবু।