Date : 2024-04-19

মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বিচ্যুতি। না খুশ নবান্ন জারি করলো নতুন নির্দেশিকা।

মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বিচ্যুতি। না খুশ নবান্ন জারি করলো নতুন নির্দেশিকা।

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হলো মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তায় থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মিকে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পরিসরে ঢুকে পড়া ওই ব্যক্তিকে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে মাঝরাতে পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছিলেন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। পরে জানা যায় ওই ব্যক্তির নাম হাফিজুল। সারারাত বাড়ির পরিসরেই ছিলেন তিনি। রবিবার প্রথমে আটক ও পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি লোহার রড ও উদ্ধার হয়েছে বলে খবর। কেন, কি উদ্দেশ্যে হাফিজুল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পরিসরে ঢুকেছিলেন তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সোমবার জেড প্লাস নিরাপত্তা প্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বিচ্যুতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় নবান্নে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী। জানা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা ডিজি সিকিউরিটি বিবেক সহায় ও কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল কে এই নিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ ও দিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে মঙ্গলবার জানা গিয়েছে সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকর্মিদের রদবদল করা হয়েছে।

সূত্রের খবর যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে ইন্সপেক্টর র‍্যাঙ্কের একজন, সার্জেন্ট র‍্যাঙ্কের একজন, দুইজন কনস্টেবল র‍্যাঙ্কের পুলিশ কর্মি রয়েছেন। এছাড়া আরো বেশকিছু পুলিশ কর্মিকে বদল করা হচ্ছে বলেও খবর। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগেই এই বদল বলে জানা গিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ক্লোজ প্রক্সিমিটিতে থাকা নিরাপত্তা আধিকারিকদের এখন‌ই বদল করা হচ্ছে বলে কোনো খবর নেই। প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তায় কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের কর্মিরাও নিযুক্ত থাকেন। এই ব্যবস্থা ২৪ ঘন্টার জন্য‌ই বলবৎ থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির রাস্তা থেকে শুরু করে বাড়ির চৌহদ্দিতে রয়েছে প্রচুর সিসিটিভি। সেই সব সিসিটিভিতে কেন এই অনুপ্রবেশের ছবি ধরা পড়লো না ? সেদিন রাতে ডিউটিতে থাকা পুলিশ কি করছিল? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তায় বিচ্যুতির পর বাড়ির নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি নবান্নেও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা কর্মিদের জন্য জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ নির্দেশিকা। সূত্রের খবর, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ডিউটিতে থাকাকালীন কোনোরকম ফোন ব্যবহার করা যাবে না। নবান্নের তেরো ও চৌদ্দ তলায় ঢোকার আগে ফোন জমা রাখতে হবে। এছাড়া সারাদিন নবান্নে কারা আসছেন, কোথায় যাচ্ছেন, তাদের ফোন নম্বর সহ সবিস্তার তথ্য প্রতিদিন সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। নবান্নের পাশাপাশি কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা বৃদ্ধি নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল একঝাঁক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির চারদিক ঘুরে দেখেন। নতুন করে নিরাপত্তার জন্য আর কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, খতিয়ে দেখেন সেসব কিছু। তবে নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত‌ই চূড়ান্ত। প্রসঙ্গত বছর খানেক আগে কিছু চাকরিপ্রার্থী হঠাৎ করেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাশের টালিনালা পার করে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেই সময়েও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বিচ্যুতি নিয়ে জলঘোলা হয়েছিলো। মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বয়ং নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি পছন্দ করেন না। জেলা সফরে গেলে তাঁকে প্রায়শই সাধারন মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে দেখা যায়। তবে এবারের ঘটনা যথেষ্ট বেশি উদ্বেগজনক। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় এই ধরনের ত্রুটি বা বিচ্যুতি রাজ্য প্রশাসনের‌ও মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই মুখ্যসচিবের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা আরো ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলেই খবর।