Date : 2024-03-29

সিঙ্গল মাদার থেকে হ্যারি পটারের মা

সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক: নব্বইয়ের দশকে যাঁরা জন্মেছে বা নব্বইয়ের দশকে যাঁদের শৈশব কেটেছে তাঁদের কাছে দুরদর্শনে শক্তিমান বা চিত্রহারের পাশাপাশি আরও একটা বিষয় ভীষণ টানে। জাদু দন্ড হাতে মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে নীল দুটো চোখ। পশ্চিমী রূপকথার নায়ক হলেও ফর্সা গায়ের রঙ আর কালো চুলের, কপালের ডান দিকে কাটা চিহ্ন দেওয়া ১১ বছরের হ্যারি পটারকে কম বেশি ভালবেসেছে সবাই। নব্বইয়ের দশকের কিশোর- কিশোরীদের কেউ কেউ পড়ার বইয়ের আড়ালে “ফিলোসোফার্স স্টোন” লুকিয়ে পড়েছে তো কেউ কালো জোব্বার মতো করে চাদর গায়ে অদৃশ্য হতে চেয়েছে। তবে এই সবটাই যাঁর হাত ধরে তিনি হলেন জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিং। যিনি সবার কাছে জে. কে. রাউলিং নামে পরিচিত। ৩১ শে জুলাই ব্রিটিশ এই লেখিকার জন্মদিনে আর প্লাস নিউজের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
৫৭ বছর বয়সী জে. কে. রাউলিংয়ের সাফল্যের যাত্রাপথ একেবারেই সুমসৃণ ছিল না। সালটা ১৯৯০, ম্যানচেস্টার থেকে পাতাল ট্রেনে চড়ে লন্ডন যাচ্ছিলেন রাউলিং। ৪ ঘন্টার রাস্তা অথচ ট্রেনে উপচে পড়া ভিড়। এই অবস্থায় হঠাৎই তাঁর কল্পনায় ভেসে ওঠে ১১ বছরের ছেলেটি। সেই রাউলিংয়ের কল্পনায় জন্ম নেয় হ্যারি পটার। শুরু হয় হ্যারিকে নিয়ে লেখা। শুধু হ্যারি না একে একে আসে হগওয়ার্টস, হারমায়োনি, রন, ডাম্বলডোর এমনকি লর্ড ভলডেমর্টও। ১৯৯৫ সালে লেখা শেষ হয় “হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন”। এরপর শুরু হয় রাউলিংয়ের আসল যুদ্ধ। প্রকাশকদের দরজায় ঘুরতে থাকেন তিনি নিত্যদিন। এক এক করে আটজন প্রকাশক মুখ ফিরিয়ে নেয়।

অবশেষে ব্লুমসবারি নামের একটি প্রকাশনী ১৯৯৭ সালের ২৬ শে জুন হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বই ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন’ প্রকাশ করে। এরপর আর রাউলিংকে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পর্যন্ত তাঁর লেখা বই ৪৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে যার আনুমানিক মোট আয় ৭৭০ কোটি মার্কিন ডলার। রাউলিং লেখা শুরু করেন সংসার চালানোর জন্য। এক মেয়েকে নিয়ে প্রথম স্বামীর থেকে বেরিয়ে এসে শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। লেখা লিখি থেকে যা আয় হত তাই দিয়ে চলতে থাকে মা- মেয়ের সংসার। হঠাৎই সেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় হ্যারি পটার জন্মানোর পরে। শুধু হ্যারি পটার না, রবার্ট গ্যালব্রেইথ ছদ্মনাম নিয়েও তিনি বই লিখেছেন। হ্যারি পটার প্রেমীদের জন্য ২০১৪ সালে তিনি বড় হয়ে যাওয়া হ্যারিকে নিয়ে হগওয়ার্টসের পূনর্মিলনী বিষয়ে একটি ছোট গল্প লেখেন। সেই বছরই তিনি শুরু করেন তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইট “পটারমোর ডট কম”। এতো সাফল্যের পরেও ব্রিটিশ এই লেখিকার জীবন যাপন অত্যন্ত সাধারণ। তাঁর শুভ জন্মদিনে আর প্লাস নিউজ জে. কে. রাউলিংকে কুর্নিশ জানায়।