Date : 2024-04-26

পার্থ ফোঁড়া! ছেঁটে ফেলার দাবি কুনাল, দেবাংশু-র।

সঞ্জু সুর , সাংবাদিক : রাজ্যের মন্ত্রী (এখনও) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হ‌ওয়া, দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস কে যে যথেষ্ট বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমতাবস্থায় দল ও সরকার, উভয় জায়গা থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে ছেঁটে ফেলার দাবি তুলেছে বিরোধীরা। বিরোধীদের সুরে এবার দলের অভ্যন্তরেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে সরানোর দাবি ক্রমশঃ জোরালো হচ্ছে। এই আবহে বৃহস্পতিবার বিকালে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক ডাকলো তৃণমূল কংগ্রেস।

শুক্রবারের পর বুধবার, দক্ষিণের টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটির পর উত্তরের বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন এস্টেট‌। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এর বাড়ি থেকে উদ্ধার আরো টাকা। তারপরেই আর কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই টুইট কুনাল ঘোষের। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ টুইটে লেখেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে এখন‌ই মন্ত্রীসভা থেকে ও দলের সব পদ থেকে ছাঁটাই করা উচিৎ। ওঁকে বহিষ্কার করা উচিৎ। যদি আমার এই বক্তব্য ভুল বলে মনে হয় তাহলে আমাকে দলের সব পদ থেকে সরিয়ে দিক। আমি দলের একজন একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে কাজ করবো।”

কুনাল ঘোষের এই টুইট সামনে আসার কিছু সময়ের মধ্যেই তৃণমূলের আরকে যুব নেতা, দলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য্যের একটি টুইট সামনে আসে। যেখানে দেবাংশু কিছুটা ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করেছেন, “ঠাকুমা বলতেন, ফোঁড়া যখন পুঁজে ভরে এসেছে, অনতিবিলম্বে তাকে ফাটিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। শরীর ভালো থাকে। শান্তিতে ঘুমানো যায়। একটি ফোঁড়ার জন্য গোটা শরীরকে কষ্ট দেওয়া বৃথা।”

কুনাল ঘোষ সরাসরি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর নাম নিয়েই টুইট করেছেন কিন্তু দেবাংশু কোনো নাম না নিয়েও যা ইঙ্গিত করেছেন তাতে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না তিনি কাকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলেছেন।
পার্থর অপসারণ নিয়ে কুনাল ঘোষের টুইট প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “যখন কুনাল গ্রেফতার হয়, তখন পদ থেকে সরানোর কথা বলেছিলো পার্থ। আর আজ পার্থ গ্রেফতার হয়েছে তাই কুনাল বলছে। আসলে মাথাটাই তো পচা।” এদিকে কুনাল ঘোষ বা দেবাংশু-র টুইট নিয়ে তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির অঙ্ক‌ও দেখছেন অনেকে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর থেকে দল ও সরকারের দূরত্ব বজায় রাখলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোমতেই দূর্ণীতিকে আর প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়ে তিনি (অভিষেক) পরিষ্কার বলেছেন যে আগামি ছয় মাসের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস কে একটা অন্য ধরনের দলে উন্নীত করাই তাঁর লক্ষ্য। এদিকে শাসক দলের অভ্যন্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে সর্বোচ্চ স্তরে রেখেও কুনাল ঘোষ বা দেবাংশু অনেকটাই অভিষেক পন্থী বলেই মনে করা হয়। ফলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর অপসারণ চেয়ে কুনাল ঘোষ বা দেবাংশু ভট্টাচার্য্যের টুইট যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে কুনাল ঘোষের টুইটে কিছুটা ট্যুইস্ট ও রয়েছে।‌ কারণ সকাল ৯.৫২ তে পার্থর অপসারণ নিয়ে টুইট করেও বেলার দিকে সেই টুইট তিনি ডিলিট করে দেন।

কারণ হিসাবে তিনি লেখেন, দল যখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বৈঠক ডেকেছে, তখন আমি আমার আগের ব্যক্তিগত মত থেকে সরে আসছি। এরপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দল নেবে। বৃহস্পতিবার বিকালেই তৃণমূল ভবনে তৃণমূল কংগ্রেসের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যে বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের‌ও। ফলে সরকার যাই সিদ্ধান্ত নিক না কেন, দল হয়তো আজকেই ছেঁটে ফেলতে পারে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে। এমনটাই মনে করা হচ্ছে।