Date : 2024-04-23

দিল্লি সফরে মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা সাক্ষাৎ!

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : পাঁচ দিনের সফরে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি-র হাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার, মন্ত্রীসভা ও দল থেকে তাঁকে অপসারণ, নতুন করে মন্ত্রীসভা সম্প্রসারণ, নীতি আয়োগের বৈঠক, নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের বিরত থাকার ঘোষণা, ইত্যাদি আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের দিল্লি সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এদিকে সূত্রের খবর, শুক্রবারেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের সলতে পাকাতে জুন মাসে দিল্লি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ফের দিল্লিতে মমতা। বৃহস্পতিবার দুপুরের বিমানে দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন তিনি। এদিন‌ দিল্লি পৌঁছে‌ই ‌তিনি সরাসরি চলে যাবেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় এর বাড়িতে। সূত্রের খবর, সেখানে দলের সব সাংসদদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। পরের দিন, শুক্রবার সেই অর্থে তাঁর কোনো সরকারি সিডিউল নেই। তবে এই দিনেই রাজনৈতিক হালচল সবচেয়ে বেশি হতে পারে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে থাকা মানেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ একটা বিশেষ ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। শুক্রবার বিকালের দিকে একটা সময় আলাদা করে রাখা হয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট কারণ না জানা গেলেও দিল্লির সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে। সেই কারণেই আলাদা করে সময় ধরা রয়েছে। ইডি-র হাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি বা এনসিপি নেতা সঞ্জয় রাউত এর আটক হওয়া, সোনিয়া গান্ধী কে বার বার ইডি-র তলব করা, এইসব নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের মতো করে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে। কিন্তু দেখার বিষয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে থাকাকালীন এই বিষয় নিয়ে বিরোধী দলগুলো আবার এক ছাতার তলায় আসে কিনা। যদিও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যে বিরোধী ঐক্যের ছবি দেখা গিয়েছিলো, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের বিরত থাকার সিদ্ধান্ত সেই ঐক্যে যে ফাটল ধরিয়েছে তা একপ্রকার নিশ্চিত। সেই ফাটল এই সফরে মেরামত হয় নাকি ফাটল আরো চ‌ওড়া হয় তার উপরে নির্ভর করবে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের চালচিত্র।
এদিকে এবারের দিল্লি সফরে মূলতঃ দুটি সরকারি বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ পালনে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি সহ মোট ২৫৯ জন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।‌ আগামি ৬ তারিখ বিকাল সাড়ে চারটায় রাষ্ট্রপতি ভবনের কালচারাল
সেন্টারে সেই কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে ওইদিনই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যে নির্বাচনে এখনো পর্যন্ত ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি থাকাকালীন যদি উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভা নিজে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সমর্থণ চেয়ে বসেন, তখন হয়তো নতুন কোনো ইকুয়েশন তৈরি হলেও হতে পারে। এর পাশাপাশি ৭ আগষ্ট নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বৈঠকটিও হবে রাষ্ট্রপতি ভবনে। ২০১৯ ও ২০২১ এর নীতি আয়োগের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার পর এবারের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদান রাজ্য ও জাতীয় ক্ষেত্রেও যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করেছে।‌ বিশেষত পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইস্যুর ঠিক পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দিল্লি সফর সেই আগ্রহ কে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলেছে তা বলাই যায়। ইতিমধ্যেই বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস ‘সেটিং তত্ব’ সামনে নিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী কে আক্রমণ করতে শুরু করেছে।‌ উল্টোদিকে বিজেপির দিলীপ ঘোষ তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, “দিদি এখানে বিপদে পড়লেই দিল্লি ছোটেন।” এদিকে এবারের দিল্লি সফরে একবার নয়, পরপর দুই দিনের বৈঠকে দু’দুবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চ শেয়ার করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে কোনো বৈঠক করেন কিনা সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এই প্রথম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর আগের দফায় রামনাথ কোভিন্দ রাষ্ট্রপতি হ‌ওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রথম রাজ্যসফরে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন তিনি। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তাঁকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো। মনে করা হচ্ছে, নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কেও রাজ্যে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গতঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঠিক আগেই সমর্থণ চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে ফোন করেছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। অবশ্য সবিনয়ে সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আট তারিখ সোমবার, মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরবেন।