Date : 2024-03-29

চির অক্লান্ত , যাঁর অভিধানে ‘না’ ছিল না। অবশেষে থামল তাঁর লড়াই। চিরঘুমে আরপ্লাসের প্রাক্তন সহকর্মী স্বর্ণেন্দু দাস

সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিকঃ মঙ্গলবার ভোর হয়েছে। বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝম করে। আর সেই আবহেই ভেসে এল নিদারুণ দুঃসংবাদ। স্বর্ণেন্দু দাস আর নেই। স্বর্ণেন্দু দাস ছিলেন এই সময়ের এমন এক সাংবাদিক যাকে দেখে সত্যিই শিখতে হত প্যাশন কাকে বলে! ক্যানসার কেমোর অসহ্য যন্ত্রণা উপেক্ষা করে হাসপাতালের বেডে শুয়েই যিনি ফোনো দিতেন, তার থেকে কাজের প্যাশন শিখতে হয় বইকী!

বিরল ক্যানসারে ভুগছিলেন স্বর্ণেন্দু। আর কে না জানে ক্যানসার এমন এক রোগ যাকে ভয় পায় সবাই! কিন্তু এই তরুণ সাংবাদিক বোধহয় একটু অন্য ধাতুতেই গড়া। তাই তিনি সব উপেক্ষা করেই দৌড় জারি রেখেছিলেন। ভোট যুদ্ধ হোক কিংবা রেলের প্রেস কনফারেন্স, খুন হোক কিংবা রাজনৈতিক সমাবেশ- সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ ছিল তাঁর। সব বিটেই তাঁর অনায়াস উপস্থিতি।

হুগলির সিঙ্গুরে থাকতেন স্বর্ণেন্দু। কিন্তু তা কখনও তরুণ সাংবাদিককে দমিয়ে রাখতে পারেনি।  ২০০৭ সাল নাগাদ কলকাতার সংবাদমাধ্যমে কাজ করতে শুরু করেছিলেন স্বর্ণেন্দু। এর মধ্যেই জানা যায় স্বর্ণেন্দুর শরীরে বিরল ক্যানসার ধরা পড়েছে। সেই থেকেই চলছিল চিকিৎসা।

গত বছরের নভেম্বর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসার জন্য মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্বর্ণেন্দুকে। পরবর্তীতে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে।তারপর চিকিৎসাধীন ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেও খুব একটা উন্নতি হয়নি । স্থানান্তরিত করা হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের আইসিইউতে। আজ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন স্বর্ণেন্দু। রেখে গেলেন মা-বাবা এবং স্ত্রী আর এক ফুটফুটে ২ বছরের কন্যাকে।

আজ তাঁর প্রয়াণের খবর পেয়ে ট্যুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকজ্ঞাপন করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু  অধিকারী। কলকাতা প্রেস ক্লাবে যখন শায়িত ছিল তাঁর মরদেহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।

আজকের পর স্বর্ণেন্দু হয়তো আর সশরীরে থাকবেন না, তবে তাঁর কাজ থেকে যাবে। থেকে যাবে নবান্ন অভিযান কভারে গিয়ে ক্যামেরাপার্সনকে বাঁচাতে পুলিশের হাতে মার খাওয়া, মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার দিনে অনবদ্য কভারেজ।

থেকে যাবে মৃত্যুশয্যায় প্রায় অচেতন অবস্থায় বিড়বিড়গুলো, ‘আমার ফোনোটা নাও, এটা পিসিআর এখানে এত কথা কেন?’, থেকে যাবে জীবনের শেষ মুহুর্তেও হাসপাতালের কেবিনকে নিউজরুম ভেবে চলা ছেলেটার এক্সক্লুসিভ ব্রেকিং দেওয়ার তাগিদ, যা হয়তো আগামীদিনে অনেকেই ভাবাবে।