Date : 2024-04-20

জারি ছিল ফতোয়া ?

বিশ্বজিত ভট্টাচার্য, সাংবাদিকঃ

ধর্মের নামে মোহ যারে এসে ধরে
সে জন শুধু মারে আর মরে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর…….

দীর্ঘ তেরো বছর ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। থাকতে হয়েছিল নির্বাসনে। দিনে রাতে ছিল আতঙ্কের প্রহর। শেষ পর্য়ন্ত তেহরানের ফতোয়া বাতিলের ঘোষনায় আতঙ্কের অবসান। সত্যি কি তাই ? না কি ফতোয়া প্রত্যাহারের ঘোষণা আসলে মৃত্যুফাঁদ ? সলমন রুশদির মাথার দাম তো তাই বলছে। মাথার দাম ৩৩ লক্ষ ডলারের হাতছানি নাকি গোপনে জারি থাকা মৃত্যু পরোয়ানা? কিসের টানে কুড়ি সেকেন্ডে কুড়িবার রুশদির শরীরে নেমে এলো আততায়ীর ছুরি।

মৃত্যু পরোয়ানা
রুশদির লেখা স্যাট্যানিক ভার্সেস প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে। বইটি প্রকাশিত হতেই বিভিন্ন দেশের ধর্মগুরুরা প্রতিবাদে মুখর হন। প্রথমে এই নিন্দা, সমালোচনা থেকে দূরে ছিল ইরান। প্রতিবাদের ঝড় তীব্র হতে ইরানের কয়েকজন ধর্মগুরু দেশএর সর্বোচ্চ ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনি কে স্যাট্যানিক ভার্সেস এর কিছু অংশ অনুবাদ করে পড়ে শোনান। বইতে নির্বাসিত এক ইমামের চরিত্র তাঁরই অনুকরণে তৈরি হয়েছে বলে তাঁরা খোমেইনিকে বোঝান। এরপরেই ১৯৮৯সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইসলাম অবমাননার’ দায়ে ফতোয়া অর্থাত্ মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন খোমেইনি। রুশদির মাথার দাম ধার্য হয় ৩০ লক্ষ ডলার।

বই ঘিরে বিতর্ক
যাদু বাস্তবতায় ঘেরা স্যাকীনিক ভার্সেস এর জগত্। ফরিস্তা জিব্রায়েল ও সালাদিন চামচা। এই দুই চরিত্রকে ঘিরে বোনা হয়েছে উপন্যাসের জমি। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ এক তীক্ষ ব্যাঙ্গের কশাঘাত। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সহ এই উপমহাদেশের সব দেশেই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে পোড়ানো হয় বইটি।

নির্বাসিত জীবন
ফতোয়া জারির নয় বছর পরে তেহরান তা প্রত্যাহার করে নেয়। এই নয় বছর আত্মগোপন করে থাকেন রুশদি। বহুবার বাসস্থান বদল করেন। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার ঘেরাটোপে চলে জীবন। এই সময় আন্তোন চেকভ এর আন্তোন ও জোসেফ কনরার্ড এর জোসেফ এই দুয়ে মিলে জোসেফ আন্তোন ছদ্মনামে লিখতেন তিনি।

সাধারণ জীবনে ফেরা
১৯৯৯ সালে সাধারণ জীবনে ফেরেন রুশদি। ফতোয়া প্রত্যাহারের পরে ২০০০ সালে ভারতে এসেছিলেন তিনি৤ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাক স্বাধীনতা ও শিল্পীর স্বাধীনতার স্বপক্ষে এক জোরালো কন্ঠস্বর হয়ে ওঠেন রুশদি। ২০১২ সালে জোসেফ আন্তোন ছদ্মনামে লেখা রুশদির আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি স্যাট্যানিক ভার্সেস নিয়ে নিজের বক্তব্য জানান। ওই বছরেই জানা যায় ইরানের এক ধর্মীয় সংগঠন জারি রেখেছে ফতোয়া। এবং ৩০ লক্ষ থেকে বেড়ে তাঁর মাথার দাম ধার্য হয় ৩৩ লক্ষ ডলার। অর্থাত্ ফতোয়া প্রত্যাহার করা হয়নি। জারিই ছিল ফতোয়া।