সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : উপলক্ষ্য ছিলো বন্দে ভারত ট্রেনের শুভ সূচনা। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সবে হাওড়া স্টেশনের ২২ নম্বর প্লাটফর্মে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দেখেই ২৩ নম্বর প্লাটফর্মে উপস্থিত জনতার মধ্য থেকে আওয়াজ উঠলো “জয় শ্রী রাম”, “ভারত মাতা কি জয়”। তখন দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।
বন্দে ভারত সহ একগুচ্ছ রেলওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন হতে তখন আর অল্প কিছু সময় বাকি। মাতৃ বিয়োগের কারণে সশরীরে কলকাতায় আসতে না পারলেও আহমেদাবাদ থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। হাওড়া স্টেশনের ২২ নম্বর প্লাটফর্মে তখন পৌঁছে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বীনি বৈষ্ণব সহ রেলের আধিকারিকেরা। পৌঁছে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক, জন বার্লা, ডঃ সুভাষ সরকার। পৌঁছে গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় একই সময়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। মুখ্যমন্ত্রী হাঁটতে হাঁটতে হাওড়া স্টেশনের উত্তর প্রান্তে উদ্বোধন মঞ্চের কাছে এসে পৌঁছান। আর ঠিক তখনই পাশের প্লাটফর্মে যেখানে বিজেপির একাধিক বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্য পদাধিকারিরা ছিলেন সেখান থেকেই আওয়াজ উঠলো “জয় শ্রী রাম।” না, বিজেপির কোনো বিধায়ক বা সাংসদ কে শ্লোগান দিতে দেখা যায় নি। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে মিশে থাকা বেশকিছু মানুষ, যাদের গলায় গেরুয়া উত্তরীয় ছিলো তারা “জয় শ্রী রাম” শ্লোগান দিতে শুরু করে। ২৩ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। তাঁর ক্ষোভ আঁচ করেই রেলওয়ে আধিকারিকদের দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী কে কিছু বলছেন। সেই সময় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁর সামনে আসলে তাঁকেও নিজের ক্ষোভের কথা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যায় বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুভাষ সরকার ২৩ নম্বর প্লাটফর্মে উপস্থিত জনগনের উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে থামতে বলেন। তারপর নিজেই মঞ্চে উঠে মাইকে একই অনুরোধ করেন।
সেই সময়েই রেলমন্ত্রী অশ্বীনি বৈষ্ণব ও উপস্থিত জনতাকে শ্লোগান দেওয়া থেকে বিরত হতে বলেন। দেখা যায় রেলমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তাঁকে কিছু বলছেন। ইতিমধ্যে রেলওয়ে সুরক্ষা বল এর কর্মিরা শ্লোগানরত জনতাকে নিরস্ত্র করে। তারপর মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চের পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। এদিকে অনুষ্ঠান শুরুর সময় হয়ে যাচ্ছে। এক এক করে অতিথিরা মঞ্চের উপর উঠে আসেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চের নিচের চেয়ারেই বসে থাকেন। রেলমন্ত্রী অশ্বীনি বৈষ্ণব, রেলওয়ে আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রী কে মঞ্চে ওঠার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি সেটা প্রত্যাক্ষান করেন। এরপর ওখান থেকেই নিজের ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে এইভাবে শ্লোগান দেওয়ার ঘটনায় শুরু হয় বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিজেপি সরকারি অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। শ্রী রাম কে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করছে। উল্টোদিকে বিজেপি বিধায়ক তথা বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, “কে বা কারা শ্লোগান দিয়েছে জানি না। তবে মুখ্যমন্ত্রী এই শ্লোগান উপেক্ষা করে মঞ্চে উঠলে নিজের পদের গরিমাই রক্ষা করতেন।”