সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক :- ঘন এক ঢাল চুলের জন্য নানান রকম ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করে অনেকেই। এই সব ঘরোয়া উপকরণ চুলে দেওয়ার বদলে যদি খাওয়া যায় সেক্ষেত্রে চুল হবে সুন্দর। অনেকেই মনে করে প্রোটিন চুলের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। সেটা অনেকাংশে সত্য। তবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন, আয়রন এবং অবশ্যই বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন কোনও ব্যক্তির চুলের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। তাই এখানে চুলের জন্য প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন এবং খনিজগুলোর জন্য সুপরিচিত কয়েকটা ফল এবং সবজির একটি তালিকা দেওয়া থাকল, যা যে কারও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এগুলি।
১) কুমড়ো– এই সবজিতে আয়রন এবং বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যাকে ভিটামিন এ-র পূর্বসূরী বলে মনে করা হয়। এটি চুলের বৃদ্ধি এবং শক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। শুধু তাই নয়, কুমড়ো ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই-তে পূর্ণ, যা শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে মেরামত করতে সাহায্য করতে পারে।
২) সবুজ শাক সবজি– সবুজ শাকসবজি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, ফোলেট এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। বলা হয় এগুলো শরীরে কেরাটিন সরবরাহ করে, যা চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই জাতীয় শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা সিবাম তৈরি করতে সাহায্য করে। সিবাম মাথার ত্বক স্বাস্থ্যকর রাখে এবং মাথার ত্বকে জল ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৩) গাজর– গাজর হল ভিটামিন এ-র একটা সমৃদ্ধ উৎস। ফলত চুলের জন্য অনেক উপকারী। চুলসহ শরীরের সব কোষের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য তাই গাজর একটি উপযুক্ত খাবার।
৪) মিষ্টি আলু– মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিনের একটি বড় উৎস, যা খাওয়ার ফলে শরীরে পৌছে সেটা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ সিবামের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, যা চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৫) বেল পেপার– বেল পেপার মিষ্টি মরিচ নামেও পরিচিত। আমরা অনেকে একে ক্যাপসিকাম নামেও চিনি। এই লাল এবং হলুদ রঙের সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই ভিটামিন শরীরে কোলাজেন উৎপাদনকে উৎসাহিত করে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে চুলের গোছাকে রক্ষা করার পাশাপাশি চুলকে শক্তিশালী করে।
৬) কলা– কলা প্রাকৃতিক তেল, একাধিক ভিটামিন এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল, যা চুলের মজবুতিকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি চুল ভেঙে যাওয়া এবং বিভক্ত হওয়া নিরাময়ে সাহায্য করে। কলা প্রাকৃতিক ভাবে চুলের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, তাই মাথার ত্বকে এর পুষ্টিগুণ খুশকির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
৭) পেঁপে– পেঁপেতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা চুলের ফলিকলগুলোতে চুলের বৃদ্ধির কার্যকলাপকে উদ্দীপিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। পেঁপেতে প্রাকৃতিক ভাবে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকে যা খুশকি প্রতিরোধে সহায়তা করে। আর অবশ্যই চুলকে ভিতর থেকে পুষ্টি প্রদান করে।
৮) ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক ফল– লেবু, কমলা এবং আঙুরের মতো টক ফল ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। যে কোনও বেরি-তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং কোলাজেন থাকে। এটি চুলকে শক্তিশালী করে। এই ধরনের ফল কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল করে। এই ফলগুলো ফ্রি র্যাডিক্যাল দ্বারা প্রভাবিত অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে চুলের ফলিকলগুলোকে রক্ষা করে।
৯) ব্লুবেরি– চুল পড়া এবং অস্বাস্থ্যকর মাথার ত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। তাই সকল ব্যক্তির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত। ব্লুবেরির তেমন ফলের মধ্যে অন্যতম। ব্লুবেরির মধ্যে ভিটামিন বি এবং প্রোনথোসায়ানিডিন রয়েছে, যা মাথার ত্বক এবং চুলকে সুস্থ রাখতে পারে।