Date : 2024-04-23

দাম বেশি, ক্রেতা নেই সরকারি জমি কেনার। দাম কমানোর ভাবনায় সরকার।

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : সরকারের হাতে থাকা জমির দাম বেশি হওয়ার কারণে কোনো শিল্পপতি সেই জমি কিনতে চাইছে না। শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি জমির অবস্থান ও চরিত্র ঠিকঠাক হলেও জমির দাম অত্যধিক হ‌ওয়ায় সেই জমি কেনায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না শিল্পপতিরা। শিল্পপতিদের অনাগ্রহের কথা জেনে জমির দাম কমানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে সরকার।

২০২১ সালে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে বর্ধমানের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন এবার তাঁর লক্ষ্য বাংলাকে শিল্পে এক নম্বর স্থানে তুলে আনা। তারপর থেকে অনেকবারই এই বিষয়ে তাঁকে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। এমনকি রাজ্যে শিল্প স্থাপনে শিল্পপতিদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে একের পর এক সিদ্ধান্ত‌ও নিয়েছে তাঁর সরকার। বিশেষ করে ছোটো বা মাঝারি শিল্প স্থাপনের দিকে বিশেষ নজর দেয় রাজ্য সরকার। মাত্র পাঁচ একর জমিতেও যাতে শিল্প পার্ক করা যায় সেই সিদ্ধান্ত মন্ত্রীসভার বৈঠকে পাস করানো হয়। সেই মোতাবেক গত বছর আগষ্ট মাসে শিল্পপতিদের কাছ থেকে আগ্রহপত্র আহ্বান করে রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট শিল্প দফতর।

উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে রাজ্যের হাতে থাকা প্রায় ৪৫৬.৪৭ একর জমির তালিকাও প্রকাশ করা হয়। কোন মৌজায় কত একর জমি আছে, সেই জমির দাম কত, সব কিছুই জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় ছয় মাস হতে চললো এখনও এক ছটাক জমিও ওখান থেকে বিক্রি হয় নি বলে জানা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প স্থাপনে আগ্রহী শিল্পপতিরা সরকারি জমিতে শিল্প পার্ক করতে ইচ্ছুক, কিন্তু জমির দাম তাদের কাছে অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় সরকারি জমির দাম‌ও ভিন্ন।

এবিষয়ে দফতরের বক্তব্য, কলকাতা বা শিলিগুড়ি বা দূর্গাপুর লাগোয়া অঞ্চলে জমির যা দাম হবে, কিছুটা দূরবর্তী অঞ্চলে তো স্বাভাবিক নিয়মেই দাম কম হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, হুগলী জেলার সিঙ্গুর ব্লকের তালভোমরা মৌজায় সরকারের হাতে থাকা ৬.৩২ একর জমির দাম রাখা হয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা, আবার উত্তরের আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের ডিমডিমা চা বাগান এলাকায় পাঁচ একর জমির দাম ধরা হয়েছে ৫১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা। তবে শিল্পপতিদের আরও বক্তব্য এক‌ই এলাকায় সরকারের ধার্য করা দামের থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির দাম অনেকটাই কম। তারা সেই জমি কিনতেই পারে। কিন্তু তা করলে এক তো সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধা পেতে তাদের সমস্যা হতে পারে আর দ্বিতীয়তঃ জমি কেনার পর সেখানে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রেও স্থানীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তারা সরকারের কাছেই আবেদন করেছে যদি দাম কিছুটা কমানো যায়। এম‌এস‌এম‌ই দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, “তাঁরা বিষয়টি শুনেছেন। তাঁরাও ভাবনা চিন্তা করছেন যাতে কিছুটা দাম কমানো যায় কি না।” মন্ত্রীর মতে, “শিল্পপতিদের‌ও বুঝতে হবে সরকারি জমিতে সব রকমের পরিকাঠামো তারা তৈরি অবস্থায় পেয়ে যাবে। বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে রাস্তা, লাইসেন্স এসবের জন্য বিশেষ ঝামেলা তাদের পোহাতে হবে না। তবে দাম নিয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের যে দাবি সেটাও তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।”