Date : 2024-04-26

নির্মলার অভিযোগ, নবান্নের জবাব। কেন্দ্র রাজ্য চাপান‌উতোর।

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : শুক্রবার লোকসভায় বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অভিযোগ করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঠিক সময়ে সব তথ্য না দেওয়ায় তাদের টাকা দেওয়া সম্ভব হয় নি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ ছিলো জিএসটি ক্লেইম থেকে শুরু করে গ্রাম সড়ক যোজনার বকেয়া প্রসঙ্গে। এদিন সন্ধ্যাতেই তার জবাব দেয় নবান্ন। রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর থেকে প্রেস রিলিজ দিয়ে নির্মলা সীতারামন এর অভিযোগ কে খণ্ডন করা হয়।

শুক্রবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার বারবার জিএসটি বকেয়া নিয়ে অভিযোগ তোলে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ‌ই ২০১৭/১৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত জিএসটি বকেয়া সংক্রান্ত এজি(অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল)-র রিপোর্ট পাঠায়নি। এজি-র রিপোর্ট না দিলে কোনো রাজ্যকেই জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত টাকা কেন্দ্র দিতে পারে না। এটাই জিএসটি সংক্রান্ত নিয়ম। রাজ্য সরকার সেই নিয়ম না মেনেই বকেয়া টাকার দাবি করছে। এপ্রসঙ্গে রাজ্য সচিবালয় থেকে দেওয়া প্রেস রিলিজে নির্মলা সীতারামন এর বক্তব্যকে খন্ডন করা হয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য, জিএসটি আইন বলবৎ হ‌ওয়ার সময়েই ঠিক করে দেওয়া হয়েছিলো ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জিএসটি সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্র। এটা সাংবিধানিক আইন। এই ক্ষতিপূরণ স্থির করার প্রসেস বা পদ্ধতিটি হলো

একটি অর্থবর্ষে কোনো একটি রাজ্যের প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় এর থেকে প্রকৃত রাজস্ব আদায় এর যে পার্থক্য সেটাকেই ক্ষতি হিসাবে ধরে ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্র। প্রতি অর্থবর্ষের শেষে একাউন্টেন্ট জেনারেল এই ক্ষতিপূরণ এর অংক নির্ধারণ করে রিপোর্ট পেশ করেন। এদিকে রাজ্যের বক্তব্য ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ থেকে এই সংক্রান্ত বকেয়া টাকা কেন্দ্র দেয় নি। যার পরিমান প্রায় ২৪১০ কোটি টাকা।

নির্মলা সীতারামন এর আরেকটি অভিযোগ ছিলো কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী (CRPF) পাঠানোর খরচ বাবদ রাজ্যের কাছে ১৮৪১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে কেন্দ্রের। অর্থমন্ত্রীর এই দাবিকে নস্যাৎ করে রাজ্যের বক্তব্য, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতর এই বাহিনী পাঠিয়ে থাকে। রাজ্য না চাইলেও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এই বাহিনী পাঠানো হয়। তাহলে এক্ষেত্রে রাজ্যের দায় কেন থাকবে। তবুও তো এই বাহিনীর যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রাজ্যকেই করতে হয়। তাছাড়া অনেক সময়েই ভোট মিটে গেলেও এই বাহিনীকে রেখে দেওয়া হয়। রাজ্যের দাবি এই ভোট করতে পাঠানো সিআরপিএফ এর খরচের দায় নিক কেন্দ্র সরকার।
গ্রাম সড়ক যোজনার বরাদ্দ নিয়েও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবিকে নস্যাৎ করে রাজ্যের বক্তব্য কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিলো সেই তথ্য ২০২২ সালের জুন মাসে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তারপর আবার সেপ্টেম্বর মাসে আরও একবার কিছু প্রশ্ন তোলা হয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে। সেই সময়ে আবার তার উত্তর দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে আর কোনো অনুসন্ধান করা হয় নি, বা প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় নি। রাজ্যের বক্তব্য, এরপরেও কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে টাকা আটকে রাখা হয়েছে।
এখন দেখার বিষয় রাজ্যের এই লিখিত প্রেস রিলিজের পর কেন্দ্রের দিক থেকে নতুন কোনো তথ্য সামনে আসে কি না।