Date : 2024-04-24

AI যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। Google বনাম Chat GPT

সুজিত চট্টোপাধ্যায় : শেষ 20 বছরে গুগল ইন্টারনেট দুনিয়ায় একচ্ছত্র সম্রাট হয়ে আছে। অনেক বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা গুগলের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েও টিকে থাকতে পারেনি গুগল সার্চ ইঞ্জিন 92 % তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সবাই যখন মনে করছে গুগল ইন্টারনেট দুনিয়ায় তার পা কে শক্ত করছে এতটাই যে তাকে হটিয়ে দেওয়া কার্যত অসম্ভব, শুধু তাই নয় একেবারেই চিন্তার বাইরে। কিন্তু 2023-এর শুরুতেই এমন একটি সার্চ ইঞ্জিন আমাদের কাছে এসেছে যাতে গুগলের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন যে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে পতাকা পুঁতে দিতে এসেছে তার নাম Chat GPT। এই Chat GPT শুধু গুগলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তাই নয় আর্টিফিসিয়ালইন্টেলিজেন্স অনেক প্রচলিত শিল্পকলা থেকে পেশার দুনিয়ায় বিদায় ঘন্টা বাজবার জন্য প্রস্তুস হয়ে গিয়েছে। কৌতূহল হচ্ছে এইটাই যে এই Chat GPT আসলে ঠিক কী ? এতে সাধারণ মানুষের কী উপকার হবে ? কেনই বা গুগল তার রাজত্ব হারাবার ভয় পাচ্ছে ? আর কোন শিল্প উদ্দ্যোগ এই চ্যাটজিপিটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে ?

ঘটনাক্রম দেখে প্রয়াত মহান বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। স্টিফেন হকিং মৃত্যুর কিছুদিন আগে ভবিষ্যত্্বানী করেছিলেন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রীম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়া এতটাই বেড়ে যাবে যে সামনের মানুষের বুদ্ধিমত্তা তার কাছে শিশুসুলভ লাগবে। রোবট ক্রমশ কাছের দুনিয়া থেকে মানুষকে হটিয়ে দেবে। অর্থাত্ মানুষের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে রোবটের বুদ্ধিমত্তার যুদ্ধ এইবার শুরু হয়ে গেল।

সাল 1998, একটা ছোট কামরা থেকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের জন্ম হয়। মাত্র 20 বছরেই গুগল মানুষের জীবনে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে তাকে প্রযুক্তির বিপ্লব বলা যায়। চিকিত্সা থেকে ওষুধ, ইতিহাস থেকে ভ্রমণ যেকোনও বিষয়কে সার্চ দিলেই অতিদ্রুত ও নিখুঁত উত্তর হাতের নাগালে এসে যাবে। 20 বছরে যত বিষয় নিয়ে সার্চ দেওয়া হয়েছে তার 90 শতাংশ উত্তর দিয়েছে গুগল।

সিনেমা হোক বা খাবার দাবার, স্কুলের বাচ্চাদের প্রোজেক্টে গুগল হয়ে উঠেছে মুসকিল আসান। Gmail বা YouTube গুগলের অনেক সংস্থা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু গুগলের 60 শতাংশ আয় হয়েছে গুগল সার্চ ইঞ্জিন থেকেই।

গুগলের নিট সম্পদ 130 লক্ষ কোটি টাকার বেশি আছে। সম্পদের শীর্ষে থেকেও গুগল এই মুহুর্তে তার নিজের সংস্থাতেই রেডকোড জারি করতে হয়েছে। Chat GPT হঠাত্ ধুমকেতুর মতো উদয় হওয়ার কারণেই গুগল নিজের সংস্থায় রেডকোড জারি করেছে।

Chat GPT -র বিশেষত্ব কী ? এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট যা অনেকটাই মানুষের মতোন। আপনি যে কোনও প্রশ্ন রাখুন, আপনি কৌতূহলের যেকোনও বিষয় জানতে চান Chat GPT অতি দ্রুত আপনাকে উত্তর দিয়ে দেবে। অনেকেই প্রশ্ন করতেই পারেন গুগলও তো একই কাজ করে তাহলে Chat GPT কে নিয়ে এত ভযের কী আছে ? গুগল অতিদ্রুত উত্তর দেয় এটা যেমন ঠিক তেমনই গুগলে কোনও বিষয় সার্চ দিলে অনেক ওয়েবসাইট বা লেখার লিঙ্ক পাঠাবে আমাদের উত্তর পেতে হলে এইসব লেখা পড়তে হবে। কিন্তু Chat GPT কোনও উত্তর চ্যাটবটের মাধ্যমে অতিদ্রুত এবং অনেক গভীরতার সাহায্যে দিতে থাকে। যে কারণে পদার্থবিদ্যার জটিল অঙ্ক হোক বা কোনও প্রোগ্রামিং এর সঠিক কোডিং কি হবে সেট সহজে এবং অতিদ্রুত পাওয়া যাচ্ছে Chat GPT-র মাধ্যমে। 1 সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দেবার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার Chat GPT-কে এক কথায় বলা যেতেই পারে অতি ক্ষমতাশালী একজন শিক্ষক।

গুগল বনাম Chat GPT-র যুদ্ধে সবচেয়ে সহজে এবং নির্ভুল উত্তর কে দেবে এই নিয়ে বাজার জুড়ে শুরু হয়েছে কৌতূহলের ঝড়। 20 বছর ধরে গুগলের সাথে অভ্যস্ত মানুষ অনেক সময় তার কৌতূহলের সঠিক উত্তর পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। তখন চ্যাটজিপিটি আমেরিকান মেডিক্যাল পরীক্ষা থেকে এমবিএ-র পরীক্ষা অনায়াসে পাশ করেছে। এই খবর গুলো ঝড়ের মতো আছড়ে পড়ার পর মাত্র 2 মাসে 10 কোটি গ্রাহক Chat GPT পরিষেবা নিচ্ছে নিয়মিত। অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন যেমন টিকটক বা গুগল ট্রান্সলেটর বা উবের অথবা ইন্সাগ্রামে অভ্যস্ত হতে 7 থেকে 70 মাস সময় লেগেছে। Chat GPT এর অতিমাত্রিক প্রতিভা দেখে তাক লেগে গিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। গুগল স্পষ্ট তার বিপদ দেখতে পায়। Chat GPT সার্চ ইঞ্জিনটি তৈরি করেছে এআই সংস্থা তার পিছনে মূল অর্থ এসেছে মাইক্রোসফট থেকে। মাইক্রোসফট এবং এআই এই দুটি সংস্থা প্রথম দুই মাসের সাফল্য দেখে আরও কিছু ব্যবসায় গবেষণা করছে। ইতিমধ্যেই বাজারে এসেছে দালি। এটির সাহায্যে আপনি কোনও ছবিকে নিজের মত করে এঁকে নিতে পারেন। বিশ্বের যেকোনও ক্লাসিক ছবিকে চেতনার রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন। বিখ্যাত চিত্রকার সালভাদোর দালির নামকরণের মাধ্যমে প্রোজেক্টটিকে মাইক্রোসফট তাদের বিঙ নামের সার্চ ইঞ্জিনের অন্তর্ভূক্ত করবে। এই খবরের ফলে নাকি ভূমিকম্প তৈরি হচ্ছে গুগলের অভ্যন্তরে। দেরি না করে গুগলের সিইও সুন্দর ভাবে তাদের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন। এটা সার্বিক সত্যি ইন্টারনেট দুনিয়ায় অনেক সামাজিক মাধ্যম আছে। ইন্টারনেট কর্মীরা তাদের পছন্দ মতো ও সুবিধামত ক্রমাগত বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত হতে থাকেন। খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, গুগলের সামাজিক মাধ্যম অরকুটকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছিল ফেসবুক।

বিপদ যখন শিয়রে গুগল 2022 সালের ডিসেম্বর মাসে রেড কোড জারি করে তাদের কর্মীদের। তার ঠিক দেড় মাস বাদে গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই হাসান Chat GPT কে টক্কর দিতে তারা BARD নামে একটি AIPOD-এর উপর কাজ শুরু করেছে। মাইক্রোসফটের বক্তব্য তাদের AIPOD BARD, ChatGPT-র থেকেও ভীষণ বুদ্ধিমান এবং তত্্পর। এরপর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সামনের দিনে Chat GPT আইপড ও BARD এআইপডের মাধ্যে সম্মুখ সমর শুরু হচ্ছে। যাকে আমরা বলবো AI WAR।

এআই যুদ্ধের ফলে লেখক প্রোগ্রামার কলসেন্টার শিল্পে চাকরি হারাবেন বহু মনুষ। কারণ একটা এই ধরণের কাজে যতটা ব্যয় হয় তার থেকে আরও কম সময়ে উত্তর দেবে Chat GPT। করোনা পরবর্তী নয়া বিধিকরণ ব্যবস্থায় মানুষ ঘাড় গুঁজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যম থেকে ইউটিউবে। গুগলের ব্যবসার একাধিপত্যে জবরদস্ত ধাক্কা দিচ্ছে মাইক্রোসফট। মানুষের বুদ্ধিমত্তা সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। একই ঘটনা ঘটছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায়। বুদ্ধির সম্প্রসারণ হচ্ছে সময়ের সাথেই। অনেকে বলেন রোবট তো মানুষ তৈরি করেছে। তার কি মানুষের মতন মন আছে ? তারও মহড়া চলছে। মনে করা হচ্ছে মনের সমস্ত অনুভবকে পড়ে নিতে পারবে এআই রোবট।