Date : 2024-04-20

মহিলা স্বশক্তিকরণে সাফল্য। স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরিতে লক্ষ্য পূরণ তিন জেলার।

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে রাজ্যের তিন জেলা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো, ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর ও কোচবিহার জেলা সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। এবার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলো বাঁকুড়া জেলা। এর ফলে এই জেলার প্রায় লক্ষাধিক মহিলা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বলেই মত জেলা প্রশাসনের।

আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই কারণেই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার ফল‌ও পাওয়া যায় অচিরেই। “ন্যাশানাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন” (NRLM) বা ‘জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন” এর আওতায় ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১০ লক্ষ ৫০ হাজার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে সারা রাজ্যের প্রায় এক কোটির বেশি মহিলা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির এই সাফল্য রাজ্যকে সারা দেশের নিরিখে প্রথম পুরষ্কার এনে দিয়েছে। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে রাজ্য এই অর্থ বর্ষের (২০২২/২৩) জন্য নিজেদের লক্ষমাত্রা বেশ কিছুটা বাড়িয়ে নেয়। সেই কারণে বিভিন্ন জেলার ক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

মাসখানেক আগেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এই আর্থিক বছরের (২০২২-২০২৩) জন্য বাঁকুড়া জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬,৯০০ টি। তবে শুধু গোষ্ঠি তৈরিই নয়, সেই গোষ্ঠির ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট করা, সরকারি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করা, বাঁকুড়া জেলার ক্ষেত্রে এই সবকাজগুলিই সম্পন্ন হয়েছে। যে ৬,৯০০ টি গোষ্ঠি এই মুহূর্তে বাঁকুড়া জেলায় কাজ করছে তাতে গোষ্ঠি পিছু গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন মহিলা রয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে শুধু বাঁকুড়া জেলাতেই প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজারের বেশি মহিলা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হ‌ওয়ার পথে। মাসখানেক আগের (০৬/০২/২৩) একটি রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের হার এই রকম।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা- টার্গেট (৩৪৭৫), তৈরি হয়েছে(৩৭৬৫)। অর্থাৎ ১০৮ শতাংশ।
কোচবিহার জেলা-টার্গেট (১২১৫), তৈরি হয়েছে(১২৫৪)। অর্থাৎ ১০৩ শতাংশ।
বাঁকুড়া জেলা(১৮/০৩/২৩)- টার্গেট (৬৯০০), তৈরি হয়েছে(৬৯০০)। অর্থাৎ ১০০ শতাংশ।
মুর্শিদাবাদ জেলা- টার্গেট (১৪,৬৫০), তৈরি হয়েছে(১০,৪৬১)। অর্থাৎ ৭১ শতাংশ।
উত্তর দিনাজপুর – টার্গেট (৫২৫০), তৈরি হয়েছে(৩৭২৪)। অর্থাৎ ৭১ শতাংশ।
বেশিরভাগ জেলাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনেকটাই এগিয়ে গেলেও কয়েকটি জেলা বেশ পিছিয়েও রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল
দক্ষিণ ২৪ পরগণা- টার্গেট (২২,৯৫৪), তৈরি হয়েছে(৭,১৮১)। অর্থাৎ ৩১ শতাংশ।
উত্তর ২৪ পরগণা- টার্গেট (২৮,৮৫০), তৈরি হয়েছে(৮,৯৮৭)। অর্থাৎ ৩১ শতাংশ।
দক্ষিণ দিনাজপুর- টার্গেট (৫,৫৫০), তৈরি হয়েছে(১,৫০৩)। অর্থাৎ মাত্র ২৭ শতাংশ।
এই অর্থবর্ষ শেষ হতে বেশি বাকি নেই। ফলে যেসব জেলাগুলো এখনও বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে সেই সব জেলাগুলোকে দ্রুত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে বিশেষ করে গ্রামের মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলে তা নিশ্চিত করেই ভোট বাক্সে ডিভিডেন্ট দেবে রাজ্যের শাসক দলকে। ঠিক যেমন ভাবে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মহিলাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে যাওয়ায় নির্বাচনে জয়লাভ করতে সুবিধা হয়েছিলো। এমনটাই মত তথ্যাভিজ্ঞ মহলের।