Date : 2024-03-29

‘সবুজ সাথী’র সাইকেল বিলিতে দেরি নয়। জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ মুখ্যসচিবের

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল বিলির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে রাজ্যের বেশ কিছু জেলা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ নবান্ন। লক্ষ্যমাত্রা যাতে ফেল না করে তারজন্য জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে পরিষ্কার নির্দেশ দিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।

২০১৫ সালের বাজেট পেশ করার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র প্রথম ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের কথা জানান। নবম থেকে দশম শ্রেনীর ছাত্রীদের জন্য বিনা পয়সায় সাইকেল দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই প্রকল্প প্রণয়ন করতে চেয়েছেন। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের ড্রপ আউট রুখতে ও তাদের আরও বেশি স্কুল মুখী করে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও এই প্রকল্পের বিষয়ে খুব বেশি উৎসাহিত ছিলেন। ওই বছর (২০১৫) জঙ্গলমহলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের সূচনাও করেন তিনি। যদিও পরবর্তীকালে ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রদেরকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সভায় বলেন, ছাত্ররা তাঁর কাছে আবদার করেছে কেন শুধু ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হবে, তাদেরকেও দেওয়া হোক। তারপরেই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষার্থীদের‌ই বিনা পয়সায় সাইকেল দেওয়া হবে। সেই থেকে প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে সাইকেল বিলি করা হয়। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এ’বছর বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে রাজ্য। সূত্রের খবর, নবান্নে এমন পরিসংখ্যান এসে পৌঁছানোর পর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। কেন এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৫ শতাংশ সাইকেল বিতরণ করা হয়েছে? কেন এই কাজে গতি আসছে না? বৈঠকে তা জানতে চান মুখ্যসচিব। সূত্রের খবর, কয়েকজন জেলাশাসক বলেন স্কুলগুলোতে এখন মাধ্যমিক বা বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, তাই সাইকেল বিলির অনুষ্ঠান আয়োজন করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা আশ্বস্ত করে বলেন, পরীক্ষা মিটলেই তাড়াতাড়ি সাইকেল দিয়ে দেওয়া হবে। সম্প্রতি ৯ ফেব্রুয়ারি হাওড়া জেলার পাঁচলায় এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একযোগে রাজ্যের পনেরোটি জেলার জন্য পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন। সেদিন‌ই মঞ্চ থেকে তিনি সব জেলাশাসককে নির্দেশ দেন যাতে ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল যত শীঘ্র সম্ভব ছাত্র ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা দেখতে। তারপরেও সাইকেল বিলিতে তেমন গতি আসেনি বলেই মত নবান্নের। তাই জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যসচিব এই নির্দেশ দিয়েছেন। এখন দেখে নেওয়া যাক ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত কোন জেলায় মোট কত সাইকেল বিলি করা হয়েছে।
১) আলিপুরদুয়ার -১,৯৭,৯৭০
২) কোচবিহার – ৪,২৪,২৬০
৩) উত্তর দিনাজপুর-৪,১৮,৪৯৪
৪) দক্ষিণ দিনাজপুর-২,১৪,৫৫০
৫) জলপাইগুড়ি-৩,১২,৫৯০
৬) শিলিগুড়ি-১,৩৬,০২৩
৭) মালদহ-৬,০০,৭৫৫
৮) মূর্শিদাবাদ-৮,৫৫,৬২৪
৯) নদিয়া-৬,৫৪,৯৮৭
১০) বাঁকুড়া- ৪,৮৮,৪৪১
১১) পুরুলিয়া-৪,১৫,০৮৩
১২) ঝাড়গ্রাম-১,৩১,৪৩০
১৩) পূর্ব মেদিনীপুর-৬,১০,৬৫৬
১৪) পশ্চিম মেদিনীপুর-৫,৯১,৭৬০
১৫) পূর্ব বর্ধমান-৫,৬০,০৬৬
১৬) পশ্চিম বর্ধমান-২,৮৬,৪৯৩
১৭) হাওড়া-৫,০৯,৪৭৪
১৮) হুগলী-৫,৮৮,৫০৮
১৯) বীরভূম-৪,৪৮,৪৭০
২০) উত্তর ২৪ পরগণা-৯,৯৭,৮৩৯
২১) দক্ষিণ ২৪ পরগণা-৯,৭৯,৯৭৬
২০১৫ সালে শুরু হ‌ওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৯৫,৭৭,৮৯১ টি সাইকেল ইতিমধ্যেই বিলি করা হয়েছে। সপ্তম দফায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮,৪৫,৫৫৮ টি সাইকেল বিলির, যার মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশের কিছু বেশি সাইকেল বিলি করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ শেষের আগেই প্রায় এক কোটি (১,০৪,২৩,৪৪৯) ছাত্রছাত্রীদের কাছে সাইকেল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।