বিধানসভায় শাসকদলের বিধায়ক, মন্ত্রীদের উপস্থিতির হার নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বাম আমলের তুলনা টেনে দৃশ্যতই খেদ প্রকাশ করলেন তিনি। শুক্রবার বিধানসভায় শুরু হওয়া শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই অনুপস্থিত শাসকদলের প্রায় পঞ্চাশ জন বিধায়ক।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিধানসভায় শাসকদলের বিধায়ক, মন্ত্রীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে চালু হয়েছে হাজিরা খাতা। মন্ত্রীরা পরিষদীয় মন্ত্রীর ঘরে রাখা হাজিরা খাতায় সই করে অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন, পাশাপাশি শাসকদলের বিধায়কেরা শাসকদলের মুখ্য সচেতকের ঘরে রাখা হাজিরা খাতায় সই করেছেন। তবে শুধু সই করা নয়, বিধায়ক বা মন্ত্রীরা কখন আসছেন আর কখনই বা বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, হাজিরা খাতায় সেই সময়টাও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
এই নিয়ে নিজের আপত্তির কথা প্রথম দিনেই জানিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিন পরিষদীয় মন্ত্রীর ঘরে হাজিরা খাতায় সই করে ফিরহাদ বলেন, “আমরা স্কুলে পড়ি নাকি ? পার্টি বলেছে তাই এটা করছি, কিন্তু এটার সঙ্গে আমি সহমত নই।” কিন্তু ফিরহাদ হাকিম এমনটা বললেও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষদীয় দলের জন্য একটা শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই কমিটির সিদ্ধান্তই মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল এবং তারপরেই এই সিদ্ধান্ত এখানে কার্যকর করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত এই পরিষদীয় দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিতে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও রয়েছেন অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বীরবাহা হাঁসদা এবং ফিরহাদ হাকিম ও। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় কিছুটা খেদ নিয়েই বলেন,”যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন দেখতাম শাসকদলের (তৎকালীন বামফ্রন্টের বিধায়কদের) অর্ধেকের বেশি সদস্য উপস্থিত থাকতো। এখন সেটা হচ্ছে না। তাই আমরা (পরিষদীয় দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি) ঠিক করেছি প্রতি সাতদিন অন্তর আমরা এই হাজিরার তথ্য মুখ্যমন্ত্রী কে পাঠিয়ে দেবো যে কারা আসছেন, কারা আসছেন না।
তারপর মুখ্যমন্ত্রী বিবেচনা করবেন।” তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে জেতা প্রথম বিধায়ক তিনি। তখন বিধানসভায় একা লড়াই করতে হতো প্রবল প্রতাপশালী বাম দলের সঙ্গে। পরবর্তীতে ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত বিরোধী শিবিরেই বসেছেন তিনি। সেই সময়ের কথা স্মরণ করেই তিনি নিজের খেদের কথা জানান। দলের বিধায়কদের উদ্দেশ্য করে তাঁর স্বগোতক্তি,
এমএলএ হয়ে গেলাম, আর বিধানসভায় আসবো না ? মানুষ তো তাঁকে জেতালো বিধানসভায় যাওয়ার জন্য। বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে খুব বেশি হলে ৪০ দিন অধিবেশন হয়, সেই ক’টা দিন ও বিধানসভায় আসবে না ? এদিকে শীতকালীন অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনেই দেখা গেল শাসকদলের প্রায় ৫০ জন বিধায়ক অনুপস্থিত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্বেও বিধায়কদের এই অনুপস্থিতি পরিষদীয় দল যে সহজে মেনে নিচ্ছে না তা বোঝা যায় যখন জানা যায় যে প্রত্যেককে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানোর জন্য।