কুস্তি থেকে সাক্ষী মালিকের অবসরের পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে মহিলাদের ভবিষ্যত্ নিয়ে। কারণ যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ কুস্তিগির ব্রিজভূষণ সরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে উঠেছিল, তারপরেও তাকে পদ থেকে সরাতে নাজেহাল অবস্থা হয় কেন্দ্রের শাসক দলের। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদি কুস্তিগিরদের কথা দিয়েও রাখতে পারেনি কেন্দ্র। কুস্তিগিরদের দাবি ছিল কোনও মহিলা কুস্তিগির জাতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধান পদে বসুক যাতে মহিলাদের যৌন নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। গ্রেটা থানবার্গ বা রিহান্নারা যখন কৃষক আন্দোলন নিয়ে মুখ খোলে, তখন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারেন বহু তারকা খেলোয়াড়ই। তালিকায় ছিলেন সচিন তেন্ডুলকরের মত মুখও। অথচ মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আন্দোলনের পরেও বহু তারকাই ব্রিজভূষণের বিপক্ষে মুখ খুলতে পারেননি। কপিল দেব অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যক্তিক্রম। তিনি গেছিলেন আন্দোলনকারিদের পাশে। বিরোধীরা বলেন, তার ফলও হাতে নাতে পেয়েছেন কপিল। দেশের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হওয়া সত্বেও তাকে বিশ্বকাপ ফাইনালে আমন্ত্রণই জানায় বিসিসিআই। এহেন পরিস্থিতিতে সাক্ষী মালিকের কুস্তি থেকে অবসর ঘোষণা মটোই অবাক করার মতো নয়। কারণ তাদের দাবি নবনির্বাচিত কুস্তি সংস্থার প্রধান সঞ্জয় সিং, আদতে ব্রিজভুষণের ঘনিষ্ট। সেই কথা অবশ্য নিজেও স্বিকার করে নিয়েছেন প্রাক্তন সভাপতি। সঞ্জয়ের জয়ের পর উল্লাস দেখিয়ে ব্রিজভূষণ বলেই ফেলেছন তার ক্ষমতাই চলবে। ব্রিজ ভূষণ সরন সিংয়ের শুধু বক্তব্য শুনলেই হবে না। কেন তার এই ক্ষমতা সেটাও জানতে হবে। 6বারের সাংসদ ব্রিজভুষণ জড়িত রয়েছেন 50টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। 2019 সালে তার দেওয়া হলফনামা অনুযায়ি রাম জন্মভুমি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উত্তর প্রদেশের বহু সংখ্যাক মানুষই তাকে সমর্থন করে থাকেন এবং তা যৌন হেনস্থার মতো গুরুতর অভিযোগকে উপেক্ষা করেই। তার কলেজে গরিব পরিবারের ছেলে মেয়েদের বিনা পয়সার পড়ানোরও ব্যবস্থা রয়েছে। নিজের কেন্দ্র কাইজারগঞ্জ ছাড়াও গন্ডা এবং বাহরাইচ কেন্দ্রে বেশ প্রভাব রয়েছে এই বিজেপি নেতার। এর আগে টাডা কেসে ফেসে যাওয়ায় তিনি দা়ড়াতে পারেননি। পরিবর্তে তার স্ত্রী ভোটে দাড়িয়ে জিতেছিল। অবশ্য দলের কিছু পরিমাণ সদস্য বিষয়টিতে রুষ্ট। তবে তাকে নির্বাসিত করতে গেলে আরও চারটি আসন হাতছাড়া হতে পারে যা কাইজারগঞ্জের নিকটবর্তি। সেই কারণেই ব্রিজভুষণের বিপক্ষে কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারছে না শাসক দল। অবশ্য বিজেপির চিন্তা থাকছে হরিয়ানা নিয়ে। কারণ সেখানকার অধিকাংশ কুস্তিগির যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল। মুলত জাট সম্প্রদায়ভুক্ত তারা। অবশ্য জগদীপ ধনকর উপরাষ্ট্রপতি হওয়ায় জাটদের কিছুটা কাছে আসা সমভব, এমনই ভাবছেন হরিয়ানার বিজেপি নেতৃত্ব। এদিকে অলিম্পিক্সপদকজয়ী বক্সরা বিজেন্দ্র সিং বলছেন, সাক্ষীকে যদি সত্যি অবসর নিতে হয় তাহলে বুঝতে হবে সত্যিই সিস্টেমে কিছু গলদ আছে।
কারন যাই হোক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক। যৌন হেনস্থার মতো ঘৃন্য কাজের পরও তার বিপক্ষে ব্যবস্থা নিতে না পারা তাও রাজনৈতিক কারনে, সেটা যে বকলমে শাসক দলের ব্যর্থতা তা বলাই বাহুল্য। তবে আরও বড় ব্যর্থতা বোধহয় সাক্ষীদের অবসর না আকটাতে পারা। কারণ ব্রিজভূষণ সরণ সিংয়া রাজনৈতিক দলের হয়, কিন্তু সাক্ষী-ভিনেশরা হয় দেশের।