মেট্রোরেলের কাজের জন্য দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক এর একাংশ ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব নাকচ নবান্নের। রেল দফতরের অনুমতি নিয়েই এই স্কাইওয়াক তৈরি করা হয়েছিলো। এখন এই স্কাইওয়াক সাধারণ মানুষের কাছে একটা অন্যতম আকর্ষণের বিষয়। কোনোভাবেই তা ভাঙা হবে না বলেই মত রাজ্যের। প্রয়োজনে পথ পরিবর্তন করুক মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক এর উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করে এই স্কাইওয়াক তৈরি করা হয়। ৩৪০ মিটার দীর্ঘ ও ১০.৫ মিটার চওড়া এই স্কাইওয়াক তৈরি করেছিলো কেএমডিএ। এই স্কাইওয়াক তৈরির আগে রেল দফতরের সঙ্গে কথা বলে রেলের অনুমতি নিয়েই তৈরি করা হয়েছিলো বলে দাবি কেএমডিএ-র।
এদিকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এর বক্তব্য নিউ গড়িয়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালাতে গেলে দক্ষিণেশ্বর প্লাটফর্মের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। সেই কাজের জন্যই রাজ্যের দ্বারস্ত তারা। এই বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন “আমরা এই স্কাইওয়াক তৈরির সময় রেলকে নক্সা জমা দিয়ে অনুমোদন পাওয়ার পরই এই কাজ করেছি। এখন বলছে ভাঙতে হবে। এসব তুঘলকি কাজ নাকি ? পাশাপাশি নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেলের এই প্রস্তাবে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। নিজে যে স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করেছিলেন মাত্র পাঁচ বছর আগে, সেই স্কাইওয়াক ভাঙার বিরোধী তিনি। মঙ্গলবার তিনি জানান, “অনেক কষ্টে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক করেছি। আমার রক্ত থাকতে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক আমি ভাঙতে দেবো না। দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকে হাত দিলে বিবেকানন্দ, রাসমণিকে মনে করতে হবে।”
এদিকে শুধু দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক নয় মেট্রোরেলের আরো একটি প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের আপত্তি কথা জানা যাচ্ছে। জোকা বিবাদীবাগ মেট্রোর কাজের ক্ষেত্রে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে রাজ্য সরকারের যে জমি আছে সেখানে জমি চেয়েছে। কিন্তু রাজ্যের বক্তব্য এক ওখানে পুলিশের আবাসন রয়েছে, পাশাপাশি আরেকটি জায়গা রয়েছে যেটা মূলত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জমি। মেট্রো চাইলেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে সেই জমি ব্যবহারের জন্য অনুমতি পেতে পারে তাই তারা সেটাই করুক। আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের কোন জমি দেওয়া হবে না, বলেই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে বলেন, “বডিগার্ড লাইন একটা হেরিটেজ। ওখানে আমার পুলিশের পরিবারের সদস্যরা থাকেন। আমি বডিগার্ড লাইন্স ভাঙতে দেবো না। আমি মানে আমরা।” মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “আমাকে যদি বলে রুট তৈরি করে দাও, আমি বিকল্প রুট তৈরি করে দেবো। যেটা সহযোগিতা করার সেটা আমি করবো, কিন্তু আমার বুকের উপর দিয়ে হেরিটেজ ভেঙে দেবে, এটা আমি হতে দেবো না।”
রাজ্য সরকারের এই দুই সিদ্ধান্তের ফলে কলকাতা শহরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দু দুটি মেট্রো প্রকল্পের কাজ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হলো সেটা বলাই যায়।