Date : 2024-05-04

হাইকোর্টের নির্দেশ সামাজিক সম্মানহানি! অনিশ্চয়তার অন্ধকারে যোগ্য চাকরিজীবীরা। এবার তারাই শীর্ষ আদালতের পথে।

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়,সাংবাদিক : “ত্রুটিপূর্ণ প্যানেল লাইফ টাইম হয় না ।প্যানেল ত্রুটি মুক্ত করে যতক্ষণ যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ পাচ্ছে ততক্ষন প্যানেল বৈধ সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশে বলা হয়েছে”।

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ।সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল। কলকাতা হাইকোর্টের ইতিহাসে ২৪ হাজার ৭৫৩জনের একসাথে চাকরি বাতিলের নজির এই প্রথম। এসএসসির নবম দশম একাদশ দ্বাদশ গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাতিল করে দিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ।

কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চের নির্দেশে ঠিক কি কি উল্লেখ করা হয়েছে দেখে নেওয়া যাক এক নজরে..
@ পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ।
@ ১৭ রকম ভাবে বেআইনি হয়েছে। জাল Omr, agency নিয়োগে কোনো টেন্ডার হয়নি, এসএসসি আসল omr নষ্ট করেছে, মিরর ইমেজ নামে যা করেছে সেটা বেআইনি, আসল omr পাওয়া যায়নি, সুপার নিউমারারি পোস্ট বেআইনি ভাবে গড়া হয়েছে।
@ সোমা দাস কে মানবিক কারণে চাকরি দিয়েছে। মান্যতা দিচ্ছে কোর্ট।
@ যারা বেআইনি চাকরি পেয়েছে তাদের বেতন ফেরত দিতে হবে।
@ সিবি আই তদন্ত চালাবে
@ বেআইনি চাকরি পাওয়াদের প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করবে
@ বেআইনি ভাগে সুপার নিউমরারি পোস্ট করে চাকরি পাওয়াদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।
@ চার সপ্তাহের মধ্যে ডি এম রা বেয়াইনি নিয়োগ পাওয়াদের চিহ্নিত করে টাকা ফেরানোর ব্যাবস্থা করবে।
@ নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে হবে সিবিআইকে।
@ সুপার নিউমারারী পদে নিয়োগ ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআই তদন্ত। কার বা কাদের মদতে হয়েছে। প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে সিবিআই।
@ এত পরিমাণ বেআইনি হয়েছে যেখানে কে আসল আর কে বেআইনি নিয়োগ পেয়েছে, তার পৃথক করা দুঃসাধ্য। এমনকি রাজ্যকে তাগাদা দিলেও রাজ্য এই ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি।
@ যে কোম্পানিকে omr ও স্ক্যানিং দেওয়া হয়েছিল তাদের কোনো টেন্ডার হয়নি।

এই রায় প্রসঙ্গে মেধাতালিকায় শীর্ষে থাকা যোগ্য চাকরিজীবীদের পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, মামলার দীর্ঘসূত্র যে শুনানি হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে তাতে বারবার তিনি আদালতে জোরালো দাবী ছিল যে প্যানেল ত্রুটিপূর্ণ এবং অসঙ্গতি আছে সেই প্যানেলের মেয়াদ কখনই শেষ হতে পারে না। যতক্ষণ না সেই প্যানেল ত্রুটিমুক্ত করে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ না হয়। এবং আদালত সেই প্যানেলকে ত্রুটিমুক্ত করে যে শূন্যপদ আছে সেখানে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিক। পাশাপশি তিনি এও দাবী করেন যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করা হোক। এবং বাতিল নয়, পুনমূল্যায়ন করা হোক ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার। কারণ যেভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তাতে যদি ডিভিশন বেঞ্চ সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন তাহলে অনিশ্চয়তার ভবিষ্যতের মধ্যে চলে যাবেন যোগ্য চাকরিজীবীরা। শুধু তাই নয় তাদের সামাজিক সম্মান হানি হবে।
পাশাপাশি আশীষ বাবু এটাও জানিয়েছেন এই মামলার রায় উল্লেখ করেছিলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ
রাজ্যের মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিল সুপার নিউমারি পোস্ট। সেই সুপার নিউমারি মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন এবং নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবার পরেও যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের সমস্ত বেতন যেমন ফেরত দিতে হচ্ছে তার পাশাপাশি ১২% সুদ তাদেরকে দিতে হবে। কিন্তু যারা স্বচ্ছ এবং যোগ্য যারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন তাদের বেতন এবং সুদ কোনটাই দিতে হবে না। তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে যারা স্বচ্ছ ভাবে চাকরি পেয়েছিল তারাই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

প্রসঙ্গত,প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির শুনানি শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করলেনবিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চে। টানা শুনানি হয়েছে এই মামলার।গত ২০ মার্চ ওই বেঞ্চে শুনানি শেষ হয়।রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল আদালত।

এসএসসির গ্ৰুপ-সি, গ্ৰুপ-ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ২৪ হাজারের বেশি শূন্যপদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অনেকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটি ফেরত পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট।বিশেষ বেঞ্চকে ছ’মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত।সেই মতো গত ৫ই ডিসেম্বর মাস থেকে ওই মামলাগুলির শুনানি শুরু হয় বিশেষ বেঞ্চে।