নারায়ণ দে, সাংবাদিকঃ ‘দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে।’ জেল থেকে বেরিয়েই তোপ দেগেছিলেন। এবার বললেন, কেন্দ্রে ফের মোদী সরকার এলে বিরোধী রাজ্য সরকারগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের একে একে গ্রেফতার করা হবে। ৫০ দিন পর জামিন পেয়ে হুঁশিয়ারি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। তাঁর কথায়, দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। তার জন্য শুধুমাত্র বিরোধী দলগুলির নেতাদের গ্রেফতার করাই নয়, বিজেপিরও তাবড় নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করা হচ্ছে। কেন্দ্রে মোদী সরকার ফিরলে দু’মাসের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করলেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় গত ২১ মার্চ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে ইডি। ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর ১ জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে। ২৫ মে দিল্লিতে ভোট। তার আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর জামিন বিরোধী শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তার আভাস পাওয়া গেল শনিবারই। সকালে কনট প্লেসের হনুমান মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারাভিযান শুরু করেন কেজরিওয়াল। দুপুরে আপের প্রধান দফতর থেকে রীতিমতো বিজেপিকে একের পর এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলেন কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করলে আপ দলটাই শেষ হয়ে যাবে। কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে দেশবাসীকে মোদীজি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারি।’ কেজরিওয়ালের কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন। অথচ দেশের বড় বড় চোর-ডাকাতদের নিজের দলেই টেনে নিচ্ছেন।’ নাম না করে অজিত পাওয়ারের উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। এরপরই কেজরিওয়ালের বার্তা, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কীভাবে লড়তে হয়, সেটা কেজরিওয়ালের থেকে শিখুন।’
কেজরিওয়াল বলেন, ‘খুব ভয়ানক মিশন নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওয়ান নেশন ওয়ান লিডার মিশন। তার জন্য দেশের সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হবে। অন্যদিকে বিজেপি নেতাদের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেওয়া হবে।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেজস্বী যাদব, পিনারাই বিজয়ন, উদ্ধব ঠাকরেদের গ্রেফতার করা হবে। অন্যদিকে লালকৃষ্ণ আদবাণী, মুরলি মনোহর জোশী, সুমিত্রা মহাজনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ। শিবরাজ সিং চৌহান মধ্যপ্রদেশের নির্বাচন জেতালেন, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বসুন্ধরা রাজে, মনোহর লাল খট্টরের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর কার পালা ?’ দর্শকাসন থেকে রব ওঠে যোগীজির নামে। তারপর কেজরিওয়াল বলেন, ‘লোকসভায় জিতে এলে দু’মাসের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও বদলে দেবে। শুধু একজনই তানাশাহ দেশে থাকবেন। আর কেউ নন।’
দেশ বাঁচাতে এবার দেশের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যাবেন বলে জানান কেজরিওয়াল। ১৪০ কোটি দেশবাসীর কাছে তিনি ভিক্ষা চেয়ে বলেন, ‘দেশ বাঁচান। আমার ভারত মাকে বাঁচান। ইন্ডিয়া জোটকে মোদীজি প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। মোদীজিকে আমার প্রশ্ন, আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। আগামী বছর ১৭ সেপ্টেম্বর মোদীজির ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। মোদীজির নিয়মানুযায়ী তাঁর অবসর নেওয়ার সময়। তারপর অমিত শাহকে প্রধানমন্ত্রী করবেন ?’ এরপরই তিনি রাজ্য ধরে ধরে আসনের হিসাব কষে বলেন, ‘আমার মনে হয় না, এঁদের সরকার আর আসবে। হরিযানা, রাজস্থান, কর্নাটক, দিল্লি, বিহার, মহারাষ্ট্র, বাংলা, ঝাড়খণ্ড এমনকী উত্তরপ্রদেশের আসন সংখ্যা কমবে এনডিএ-র। সাট্টা বাজারেও চর্চা চলছে, ২২০-২৩০ আসন পাবে বড়জোর। ইন্ডিয়া জোটের সরকার আসছে কেন্দ্রে।’
গ্রেফতারের পর কেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি, সেই নিয়ে বিজেপির সমালোচনারও জবাব দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী হতে আসিনি। প্রথমবার সরকার গড়ার ৪৯ দিনের মাথায় নিজে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার ইস্তফা দিলে একনায়কতন্ত্রের কাছে মাথা নত হয়ে যেত। আমি লড়তে এসেছি, মাথা নত করতে নয়। গণতন্ত্রকে জেলবন্দী করলে, জেল থেকেই সরকার চালাব।’ হেমন্ত সোরেনেরও ইস্তফা দেওয়া উচিত হয়নি বলে দাবি করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
আরও পড়ুন : বেআইনি নির্মাণ ভাঙ্গা নিয়ে এজলাসেই কাঁথি পুরসভা বারংবার পুর্ত দফতরের দিকে আঙ্গুল তোলায় ধমক বিচারপতি সিনহার